অনশন শুরুর পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি তিন পড়ুয়া। ছবি: রয়টার্স
স্বাধীন ভোটাধিকারের দাবিতে রাস্তাতেই অনশন, নাকি পিছু হটে অন্য পথ, দ্বিধায় খোদ আন্দোলনকারীরা। গণতন্ত্রে চিনের দাদাগিরি রুখতে একটা অংশ আমরণ অনশনের পক্ষপাতী। অন্য অংশ সংঘর্ষের পরিস্থিতি এড়াতে রাস্তা থেকে সরে আসতে চাইছে। পরিবর্তে বৃহত্তর জনমত গঠন করার কথাই আজ জানিয়েছেন আন্দোলনের অন্যতম তিন প্রধান মুখ। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মাস দু’য়েকের আন্দোলন সম্প্রতি যে ভয়াবহ আকার নিয়েছে, তার দায় নিয়ে বুধবার পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন বলেও জানিয়েছেন বেন্নি তাই, চান কিন-ম্যান ও চু ইউ মিং।
‘এক দেশ, দুই নীতি’-র শর্ত মেনেই ১৯৯৭ সালে চিনে যোগ দেয় হংকং। ঠিক হয়েছিল, চিনের মধ্যে থাকলেও শাসনব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেকটাই স্বাধীনতা পাবে হংকং। অথচ অভিযোগ, ২০১৭-য় শহরের নির্বাচন ঘিরে বাগড়া দিচ্ছে বেজিং। নির্বাচনে কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, সেটাও ঠিক করে দিতে চাইছে চিন। গণতন্ত্রের দাবিতে সেই থেকেই শুরু দফায় দফায় আন্দোলন। ছাতা মাথায় নিয়ে শান্তিপূর্ণ জমায়েতই এত দিন দেখা গিয়েছিল শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে।
ছবিটা বদলে যায় রবিবার রাতে। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় অ্যাডমিরালটি জেলা সদরের লুং ও সড়ক। বিক্ষোভ থামাতে ব্যাপক লাঠিচার্জের পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাস ও মরিচগুঁড়ো ছোড়ে পুলিশ। পুলিশকে পাল্টা মারের অভিযোগ উঠেছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধেও। এর জেরে সোমবার দিনের শুরু থেকে প্রায় দুপুর পর্যন্ত এলাকার সমস্ত সরকারি দফতর বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় প্রশাসন। বিকেলের পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। হংকং পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার সকালের মধ্যেই ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দিনের শেষে ধৃত আরও ১২। প্রশাসনিক হুমকির তোয়াক্কা না করেই আন্দোলনকারীরা অবস্থানে অনড় থাকবেন বলে জানিয়েছেন। সেই মোতাবেক সোমবার সন্ধে থেকেই অনশনে বসেন তরুণ ছাত্র নেতা জসুয়া ওং। সঙ্গী আরও দুই ছাত্রী।
হংকংয়ের প্রশাসনিক প্রধান সি ওয়াই লেয়ুঙ সরাসরি আন্দোলন নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও অনশনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন আজ। তার প্রতিক্রিয়ায় ছাত্র নেতার বক্তব্য, “জানি এতে আমার শরীর ভেঙে পড়বে, তবু অনশন চলবেই। সরকারকে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতেই হবে।”
খোদ হংকংয়ের একটা অংশ থেকে এই আন্দোলন ঘিরে কটাক্ষ এলেও, প্রথম থেকেই এর প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছেন ১৯৮৯ সালে চিনের তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ারের বিদ্রোহী নেতা ঝৌ ফেঙসুও।