সংবাদ সংস্থার অফিসের বাইরে দাড়িয়ে পুলিস বাহিনী ছবি সংগৃহীত।
মাস ছয়েক আগেকার ঘটনারই পুনরাবৃত্তি যেন। জাতীয় নিরাপত্তা আইনের জোরে ফের স্থানীয় একটি সংবাদ সংস্থার অফিসে আজ ভোরে তল্লাশি চালাল হংকং পুলিশ। রাষ্ট্রদ্রোহের ‘অভিযোগে’ গ্রেফতার করা হয়েছে স্ট্যান্ড নিউজ় নামে ওই সংস্থার বর্তমান ও প্রাক্তন কর্মী-সহ মোট ছ’জনকে। ধরপাকড়ের পরে সংস্থার সব দফতর বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্ট্যান্ড নিউজ় কর্তৃপক্ষ।
গত জুন মাসে একই কায়দায় চিন-বিরোধী খবর প্রকাশের জন্য বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল অ্যাপল ডেলি নামে এক সংবাদপত্রের যাবতীয় সম্পত্তি। গ্রেফতার করা হয় ওই সংস্থার প্রধান তথা মিডিয়া টাইকুন জিমি লাই-কে। তার পর থেকে জেলেই রয়েছেন জিমি। দেশদ্রোহ-সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। গণতন্ত্রকামী জিমি গ্রেফতার হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অ্যাপল ডেলির দফতর বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ।
ঠিক একই ভাবে আজ ভোরে স্ট্যান্ড নিউজ়ের দফতরে তল্লাশি চালাতে হাজির হয় কমপক্ষে ২০০ জন পুলিশ অফিসারের একটি দল। সংস্থাটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান সম্পাদক প্যাট্রিক ল্যামকে হাতকড়া পরিয়ে দফতর থেকে বার করে আনে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয় দফতরের প্রচুর নথি। ল্যামের সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয়েছে স্ট্যান্ড নিউজ়ের প্রাক্তন প্রধান সম্পাদক ও বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের চার জন সদস্যকে।
ভোরের আলো ফোটার আগে সংস্থার ডেপুটি এডিটর রনসন চ্যানের বাড়িতেও তল্লাশি চালাতে হাজির হয়ে যায় পুলিশ। ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে স্ট্যান্ড নিউজ়ের তরফে গোটা পর্বের ভিডিয়ো দেখানো হয় আজ। ব্রিটিশ আমলের আইনের আওতায় চ্যানের বাড়ি তল্লাশি করা হয়ছে বলে জানিয়েছে হংকং পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে যড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তাঁকে আজ গ্রেফতার করা হয়নি।
গ্রেফতারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিজের পদ থেকে ইস্তফা দেন প্রধান সম্পাদক প্যাট্রিক ল্যাম। এবং সংস্থার তরফে জানানো হয়, সমস্ত কর্মীকে বরখাস্ত করে স্ট্যান্ড নিউজ়ের সমস্ত দফতর, ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতির জন্যই এই সিদ্ধান্ত।
বিদায়ী বার্তায় স্ট্যান্ড নিউজ়ের তরফে বলা হয়েছে, ‘আমরা জানি আমরা এত দিন নিরপেক্ষ ভাবে গণতন্ত্র, সুবিচার, স্বাধীনতা ও মানবিকতার পক্ষে সওয়াল করে খবর প্রকাশ করেছি।’ এই সংস্থার উপরে যে খুব শীঘ্রই শাস্তির খাঁড়া নামতে চলেছে, গত কয়েক মাস ধরেই তা বোঝা যাচ্ছিল। চলতি মাসেই হংকংয়ের নিরাপত্তা প্রধান ক্রিস ট্যাং ওই সংস্থার বিরুদ্ধে একপেশে ও ভুয়ো খবর প্রকাশের অভিযোগ এনেছিলেন।
অ্যাপল ডেলি-র পরে এই সংবাদ সংস্থাটির দফতর বন্ধ হয়ে যাওয়া অশনি সঙ্কেত বলে মনে করছেন হংকংয়ের সাধারণ গণতন্ত্রকামী মানুষ। নির্বাসিত মানবাধিকার কর্মী নাথান ল টুইট করে বলেছেন, ‘‘সত্যি কথাটা বলার সাহস দেখানোর খেসারত দিতে হল স্ট্যান্ড নিউজ়কে।’’ সানি চিউং নামে আর এক আন্দোলনকারী বলেছেন, ‘‘বিরোধিতার সব রাস্তা বন্ধ করার পথে হাঁটছে বেজিং।’’
তবে হংকংয়ের পাশাপাশি উদ্বেগ বাড়ছে তাইওয়ানের পরিস্থিতি নিয়েও। আজই তাইওয়ানের নির্বাচিত সরকারকে এক প্রকার হুমকি দিয়েছেন চিনের তাইওয়ান সংক্রান্ত দফতরের মুখপাত্র মা শিয়াওগুয়াং। তাঁর বক্তব্য, তাইওয়ানের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীরা’ সেখানে স্বাধীনতার দাবি তুললে বেজিং সব সীমা লঙ্ঘন করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। আগামী বছর তাইওয়ান প্রণালীর পরিস্থিতি আরও জটিল হবে বলেও দাবি করেছেন শিয়াওগুয়াং। তাইওয়ানের উপরে
চাপ বাড়াতে গত কয়েক মাস ধরেই তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে অজস্র বার চিনা সামরিক বিমান চক্কর কেটে চলেছে বলে অভিযোগ তুলেছে তাইপেই।