হংকংয়ের রাস্তায় বিক্ষোভকারী ও পুলিশের ধস্তাধস্তি। রবিবার। রয়টার্স
কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে পুলিশ, ছোড়া হচ্ছে লঙ্কার গুঁড়ো, এক জন বিক্ষোভকারীও যাতে লুকোতে না পারেন, তাই শনাক্ত করতে নীল জলের কামান নামানো হয়েছে রাস্তায়। কিছুই বাদ রাখেনি হংকংয়ের ক্যারি ল্যামের প্রশাসন। যদিও গণতন্ত্রকামী জনতা অপ্রতিরোধ্য। এই সপ্তাহান্তেও পথে নেমেছে হংকং। রবিবার নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, প্যারিস, সিডনি-সহ ১২টি দেশের ২৯টি শহরে হংকংয়ের ‘স্বাধীনতা’র স্লোগান ওঠে। সামনেই চিনের ৭০তম প্রতিষ্ঠা দিবস। তার আগে বিক্ষোভের আঁচ গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়াই লক্ষ্য আন্দোলনকারীদের।
হংকংয়ে আজ পথে নেমেছিলেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রস্তুতি ছিল পুরোদমে। সারা গা-হাত-পা ঢাকা ‘যুদ্ধের পোশাকে’। মাথায় হেলমেট। পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের সঙ্গে যুঝতে মুখে গ্যাস-মুখোশ। এক হাতে প্রতীকী ছাতা, আর এক হাতে কাঁদানে গ্যাসের ক্যান কিংবা লাঠি।
আগামী ১ অক্টোবর, মঙ্গলবার ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চিন’-এর ৭০তম প্রতিষ্ঠা দিবস। ওই দিন দেশ জুড়ে উৎসব চলবে চিনে। বেজিংয়ে সাজো সাজো রব। কিন্তু হংকং বিক্ষোভের আঁচ যে প্রতিষ্ঠা দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানে পড়বে, তা ভালই টের পাচ্ছে বেজিং। গণতন্ত্রকামীরা চিনের ‘সর্বগ্রাসী’ শাসনের বিরুদ্ধে গোটা পৃথিবী জুড়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এই বিক্ষোভের কোনও মুখ নেই। তাই সোশ্যাল মিডিয়া মারফত জোটবদ্ধ হচ্ছেন সকলে। আজ যেমন ও ভাবেই কজ়ওয়ে বে-তে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ জনতাকে মাঝপথে থামিয়ে তল্লাশি শুরু করে। মিছিলে বাধা দেয়। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস। কিন্তু তাতে সাময়িক ভাবে ছত্রভঙ্গ হলেও পর মুহূর্তে একজোট হয়ে রাস্তায় নামে মানুষ। হংকং সিটির কিছু এলাকায় আজ রবার বুলেটও ছোড়ে পুলিশ।
কিছু বিক্ষোভকারী আবার সাবওয়ে স্টেশনগুলোতে ভাঙচুর চালান। চিনের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে বেশ কিছু জায়গায় প্রকাণ্ড ব্যানার টাঙানো হয়েছিল। সে সব ছিঁড়ে দেন তাঁরা। কিছু জায়গায় বিক্ষোভকারীদের হাতে ‘চি-নাৎসি’ পতাকা দেখা গিয়েছে। চিনের পতাকাই প্রায়, শুধু হলুদ তারাগুলোয় জায়গায় স্বস্তিক চিহ্ন।
হংকংয়ের রাস্তায় নেমেছিলেন ২০ বছর বয়সি কলেজপড়ুয়া টোনি। তাঁর হাতে ছিল ইউক্রেনের পতাকা। সেটাও প্রতিবাদের চিহ্ন। ২০১৪ সালে গদি থেকে রুশ-সমর্থক প্রেসিডেন্টকে সরাতে আন্দোলেন নেমেছিল ইউক্রেন। টোনি বলেন, ‘‘আমরা যদি গোটা পৃথিবীতে একজোট হতে পারি, চিনা কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে লড়তে পারি, তা হলে আমরা জিতে যাব।’’ ৬২ বছর বয়সি আন্দোলনকারী ম্যান জানিয়েছেন, ১৯৯৭ সালে ব্রিটেন হংকংকে ফের চিনের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার পর থেকে এখানের মানুষের জীবনযাত্রা ও স্বাধীনতার অবনতি ঘটেছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমূল বদলে ফেলতে বলছি না সব। কিন্তু বদল আসা প্রয়োজন। মানুষের কথা শোনা উচিত সরকারের।’’
তাইওয়ানেও আজ ‘হংকং মার্চ’ হয়েছে। বিক্ষোভের ছায়া পড়েছিল সিডনিতেও। ২৫ বছর বয়সি হংকংয়ের নাগরিক বিলি ল্যাম অস্ট্রেলিয়ায় থেকে পড়াশোনা করেন। বললেন, ‘‘ফেসবুকে লাইভ ভিডিয়ো দেখি, খুব মন খারাপ হয়।’’ সকলেরই বক্তব্য, হংকং চিনের হাতে যাওয়ার পর থেকেই গণতন্ত্র ধুঁকতে শুরু করেছিল। কিন্তু গত ১৭ সপ্তাহে চরম রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাক্ষী হয়েছে হংকং। মঙ্গলবার চিনের প্রতিষ্ঠা দিবসকে তাই ‘শোক দিবস’ পালন করবে তারা।