বরফশুভ্র। ছবি: এপি।
দু’সপ্তাহ হতে চলল। বম্ব সাইক্লোনের চোখরাঙানির পরে এখনও ধুঁকছে আমেরিকার পূর্ব এবং উত্তর পূর্ব অংশ। এই ঘূর্ণিঝড়ে সব চেয়ে সঙ্কটে গৃহহীন অগুনতি মানুষ। বস্টনের পাইন স্ট্রিটের এমন একটি আশ্রয় শিবিরের কমন রুমে সার দিয়ে রাখা বিছানার সংখ্যা বাড়াতে হচ্ছে। রাত বাড়তেই বিভিন্ন জায়গা থেকে জড়়ো হচ্ছেন অনেক।
বস্টনের পাঁচতলা বাড়িটিতে অন্তত ৫০০ মানুষের ঠাঁই হয়। কিন্তু তা এখন যথেষ্ট নয়। বড়দিনের পর থেকে এই বাড়িতেই অতিরিক্ত একশো লোক আশ্রয় নিয়েছেন। হিমাঙ্কের নীচের তাপমাত্রা নিউ ইংল্যান্ড জুড়ে। টেক্সাস, নর্থ ক্যারোলাইনায় অন্তত তিন জন গৃহহীন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এই চিত্র দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত সাত বছরের হিসেব দেখলে বোঝা যাবে ২০১৭ সাল থেকে আমেরিকায় গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে অনেকটাই। গত মাসে এক সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের এক রাতে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা ছুঁয়েছিল সাড়ে পাঁচ লক্ষেরও বেশি। ২০১৬ সালের তুলনায় সংখ্যাটা এক শতাংশ বেড়েছে বলে সমীক্ষায় দাবি। নিউ ইয়র্ক থেকে সান ফ্রান্সিসকো— সব শহরেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাড়ির দাম। সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে আরও ভয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিস্থিতি।
পাইন স্ট্রিটের বাড়িতে সুস্থসবল গৃহহীন কেউ রাতে থাকতে এলে সাধারণত তাঁদের সকালবেলা চলে যেতেই অনুরোধ করেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বস্টনে গত ১১ দিন ধরে তাপমাত্রা টানা হিমাঙ্কের নীচে। আবহবিদদের পূর্বাভাস, এর পরে মাইনাস ১৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামতে পারে তাপমাত্রা। তাই দিনের বেলাতেও কাউকে বাইরে ঠেলে দিতে ইতস্তত করছেন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মুখপাত্র বারবারা ট্রেভিসান বলেছেন, ‘‘আমরা চাই না খোলা রাস্তায় পড়ে থেকে কেউ মারা যান! অবস্থা এখন তেমনই।’’
এমন হাড়কাপানো ঠান্ডার মোকাবিলায় বস্টন, নিউ ইয়র্ক-সহ বেশ কিছু বড় শহরের পথে পথে অনেকে উদ্যোগী হয়ে আশ্রয়হীন মানুষের কাছে গিয়ে অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরের খোঁজ দিচ্ছেন। ‘কোয়ালিশন ফর দ্য হোমলেস’ নামে এক সংস্থার দাবি, নিউ ইয়র্কে গৃহহীনদের সঙ্কট সব চেয়ে বেশি। ২০১৭ সালে এ শহরে মাথার উপরে ছাদ ছিল না অন্তত এক লক্ষ তিরিশ হাজার মানুষের। এই শহরের ‘ডিপার্টমেন্ট অব হোমলেস সার্ভিসেস’-এর মুখপাত্র আইজ্যাক ম্যাকগিন জানাচ্ছেন, তাঁদের মোট ১১০০টি আশ্রয় শিবির আছে। এ ভাবে গৃহহীনদের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় সেখানে ৪৫০ অতিরিক্ত শয্যার ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা।
বস্টনে পাইন স্ট্রিটের বাড়িতেও শুক্রবার দুপুরে স্যুপ আর স্যান্ডুইচ দেওয়া হচ্ছে শুনে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ। খাবার, শয্যা সব কিছুর অতিরিক্ত ব্যবস্থা করতে গিয়ে ভাঁড়ারে টান পড়ছে আশ্রয় শিবিরগুলোরও। তারা জানাচ্ছেন, গত ২৫ বছরে টানা এমন ঠান্ডা দেখেননি কেউ। তাই পরিস্থিতি এতটা হাতের বাইরে চলে যায়নি বলে তাঁদের দাবি।