জিরজিরে, প্রায় নগ্ন দু’টো কিশোর-শরীর। কোমরের কাছে ছেঁড়া কাপড় জড়িয়ে কোনও ক্রমে লজ্জা ঢাকার চেষ্টা। এক জনের পায়ে বেঢপ এক জোড়া জুতো। আর এক জনের জুতো শুধু এক পায়ে। ফ্যাকাশে হাড়-বার করা মুখে কোটরে বসা চোখ। দৃষ্টি শূন্য।
হলোকস্টের কম ছবি দেখেনি দুনিয়া। মৃতদেহের স্তূপ, গুলিবিদ্ধ শিশুর পাহাড়— নিধনযজ্ঞের কতশত ছবি আমাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু গত শতকের তিন ও চারের দশকে তোলা সেই সব ছবি সাদা-কালো। সেই সব ছবির কয়েকটি এ বার ‘রঙিন’ করে তুলেছে এক ব্রিটিশ কিশোর, ১৭ বছরের জোয়েল বেলভিউরে।
ছবি তোলার পাশাপাশি পুরনো ছবিকে ‘রেস্টোর’ বা পুনর্নিমাণ করা হাইস্কুল পড়ুয়া জোয়েলের নেশা। কিন্তু হঠাৎ হলোকস্টের সাদা-কালো ছবি রঙিন করার ইচ্ছে হল কেন? জোয়েলের উত্তর, ‘‘ওই সময়টা বিস্মৃতির অতলে যাতে তলিয়ে না যায়, সে জন্যই।’’ তার পুনর্নির্মিত বেশ কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছে ব্রিটেনের এক সংবাদ সংস্থা।
নাৎসি বাহিনীর হাতে ১৫-২০ লক্ষ শিশু-সহ এক কোটি মানুষ খুন হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৫০-৬০ লক্ষ ইহুদি। এই সব তথ্য সকলের জানা হলেও এই সময় থেকে ঐতিহাসিক দলিল খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। ফলে বহু প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তরও মেলে না। জোয়েলের কথায়, ‘‘এই ফাঁকটা দিয়েই অবিশ্বাসের চারা জন্ম নেয়। এখন এক দল ‘রিভিশনিস্ট’ বা ‘শোধনবাদী’ ইতিহাস রচয়িতা হলোকস্টের গুরুত্ব খাটো করে দেখতে চান। তাঁরা এমন ভাব দেখান, যেন সে সময়ে বিশেষ অত্যাচার হয়নি, লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা তো দূরের কথা! ঝাপসা হয়ে যাওয়া সাদা-কালো ছবি দিয়ে তাঁদের বোঝানো মুশকিল, কী ধরনের অত্যাচার হয়েছিল।’’
যে কয়েকটি ছবি জোয়েল আপাতত ‘রেস্টোর’ করেছে, তার মধ্যে অন্যতম ওই দুই কিশোরের ছবি। ১৯৪৫ সালের ৪ মে জার্মানির আম্পফিং ক্যাম্পের বন্দিদের মার্কিন সেনা মুক্ত করার সময়ে ওই ছবি তোলা হয়েছিল। রঙিন ছবিতে স্পষ্ট তাদের ঠেলে বেরিয়ে আসা পাঁজর, কঙ্কালসার পা। আর একটি ছবি বুখেনওয়াল্ড কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের। নগ্ন মৃতদেহের স্তূপের পাশে প্রাক্তন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট, তৎকালীন সেনেটর অ্যালবেন ডব্লিউ বার্কলে। নাৎসি জার্মানির বৃহত্তম এই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পটিতে বন্দির সংখ্যা ছিল আড়াই লক্ষ। তাঁদের মধ্যে মারা গিয়েছিলেন প্রায় ৬০ হাজার। ১৯৪৫ সালের ১৫ এপ্রিল মার্কিন সেনাবাহিনী এই ক্যাম্পের দখল নেয়। তত দিনে সেখান থেকে পালিয়েছে জার্মান সেনারা। ফেলে রেখে গিয়েছে হাজার হাজার মৃতপ্রায় মানুষ আর স্তূপীকৃত মৃতদেহ।
‘‘বর্বরতার ছবি ফিকে হয়ে যেতে পারে, তাতে বর্বরতাটা কমে যায় না।’’ সত্তর বছরের পুরনো ছবিগুলোকে ‘আধুনিক’ রূপ দিয়ে সেই কথাটাই মনে করিয়ে দিতে চায় জোয়েল।