মুজিবুর রহমান। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের স্কুল পাঠ্যক্রমে এ বার আরবিকে অন্তর্ভুক্ত করছে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। মাধ্যমিক স্তরে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এই বিষয়টি পড়তে হবে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও পাঠ্যপুস্তকে কিছু পরিবর্তন করা হচ্ছে, শিক্ষা দফতরের সংশ্লিষ্ট অফিসারদের দাবি অনুযায়ী যা ‘মামুলি’। সেই পরিবর্তনের অঙ্গ হিসাবে বাংলা পাঠ্যবই থেকে ৪ জন লেখকের লেখা সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে এক জন শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষা আন্দোলন নিয়ে তাঁর রচনা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ আগামী বছর আর পাঠ্যবইয়ে থাকছে না।
একই সঙ্গে সোমবার রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবন-এর দরবার কক্ষ থেকে খুলে নেওয়া হয়েছে শেখ মুজিবের ছবি। রবিবার এই কক্ষেই শপথ নিয়েছেন উপদেষ্টারা। সোমবার সকালে নতুন উপদেষ্টা, গণঅভ্যুত্থানের তথাকথিত ‘মাস্টারমাইন্ড’ মাহফুজ আলম ফেসবুকে পোস্ট করে জানান, ছবিটি সরানো হয়েছে। মাহফুজ লেখেন, ‘৭১ পরবর্তী ফ্যাসিবাদী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দরবার হল থেকে সরানো হয়েছে। এটা আমাদের কাছে লজ্জার যে ৫ অগস্টের পরে বঙ্গভবন থেকে তাঁর ছবি আমরা সরাতে পারিনি। ক্ষমাপ্রার্থী।’
ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ (এনসিটিবি)-কে নির্দেশ দেয় পাঠ্যসূচিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা’-র অনুসারী করতে হবে। শিক্ষা দফতরের এক সূত্রের কথায়, সেই অনুযায়ী ‘আলিম-ওলামাদের পরামর্শ মেনে’ মাধ্যমিক স্তরে আরবি ভাষা-কে বিষয় হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। উচ্চমাধ্যমিকে বাংলা পাঠ্যবই থেকে চার জন লেখকের লেখা প্রবন্ধ ও কবিতা বাদ দেওয়া হচ্ছে। শেখ মুজিব ছাড়া বাকি মুহাম্মদ জাফর ইকবালের পাঠ্যে অন্তর্ভুক্ত সব লেখা এবং মহাদেব সাহার কবিতা ‘শান্তির গান’ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। বাদ পড়ার কারণ— এঁরা ‘ফ্যাসিবাদীদের অনুগত’। এমন আর এক জন লেখককে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আপাতত বিবেচনাধীন রয়েছে, যাঁর নাম বলা হচ্ছে না।
রবিবার যে তিন জনকে উপদেষ্টা করা হয়েছে, তার মধ্যে মাহফুজ আগাগোড়াই বিতর্কিত। সোমবার পর্যন্ত তাঁকে কোনও দফতর দেওয়া হয়নি। কিন্তু অন্য দু’জন— শেখ বশির উদ্দিন এবং মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে কার পরামর্শে উপদেষ্টা করা হল, সেই প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারের সমর্থক গোষ্ঠীগুলির নেতারা। রবিবার উপদেষ্টা হিসাবে শপথ নেওয়া ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আকিজ় গ্রুপের কর্ণধার বশির উদ্দিনের পরিবার আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। বশিরের ভাই শেখ আফিল উদ্দিন যশোর-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে ৪ বার সাংসদ হয়েছেন। আওয়ামী ঘনিষ্ঠতার খেসারত হিসাবে বশিরের নামও ঢাকায় একটি খুনের মামলায় জোড়া হয়েছে। কী ভাবে তাঁর নাম ঢুকেছে জানেন না। চলচ্চিত্র নির্মাতা ফারুকীও আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক আজ তাঁর বিষয়ে কড়া আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, “ফারুকী নাস্তিক। হেফাজতের নেতা শফি হুজুরকে ‘তেঁতুলে হুজুর’ বলে ব্যঙ্গ করতেন। তাঁকে উপদেষ্টা করে ওলেমাদের অপমান করল ইউনূস সরকার।” আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লা ও সমন্বয়ক সারজিস আলম অভিযোগ করেছেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে। নতুন উপদেষ্টা বাছাই প্রমাণ।’