বিড়ম্বনার মুখে পড়লেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি। ছবি: রয়টার্স।
ইরান বিপ্লবের ৪৪তম বর্ষপূর্তিতে হ্যাকারদের জেরে বিড়ম্বনার মুখে পড়লেন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি। এক টিভি অনুষ্ঠানে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য রাখছিলেন তিনি। হঠাৎ কয়েক মিনিটের জন্য তাতে বিরতি লাগাল ইরান সরকার বিরোধী আন্দোলনকারী হ্যাকারেরা। টিভির পর্দা থেকে রইসির ছবি উধাও হয়ে ভেসে উঠল এক সরকার-বিরোধী আন্দোলনকারী সংগঠনের লোগো! সঙ্গে শোনা গেল স্লোগান— ‘ধর্মীয় প্রজাতন্ত্র নিপাত যাক।’
সরকারের কট্টরপন্থী মনোভাবের বিরুদ্ধে সুর চড়ছে দেশে। তার মধ্যেই ইরান বিপ্লবের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শনিবার দেশ জুড়ে ছিল সাজো-সাজো রব। এ দিন মিছিল থেকে শুরু করে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল সরকারের তরফে। এক টিভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল রইসিরও। পরিকল্পনা মতোই এগোচ্ছিল সব কিছু। ভাষণে ইরানের ‘বিপথগামী যুবকদের’ প্রতি বার্তা দিচ্ছিলেন রইসি। তিনি বলেন, তাঁরা যা করছেন তার জন্য অনুতপ্ত হওয়া উচিত তাঁদের। তা হলে হয়তো তাঁদের ক্ষমা করে দিলেও দিতে পারেন দেশের শীর্ষ নেতা আয়াতোল্লা খামেনেই। রইসি আরও বলেন, এই পথে হাঁটলে ইরানবাসীরাও তাঁদের ফের বুকে টেনে নেবে।
তবে অনুষ্ঠানের মাঝেই হঠাৎ স্ক্রিনে ভেসে ওঠে ‘এদালাত আলি (আলির বিচার)’ নামে সরকার-বিরোধী এক গোষ্ঠীর লোগো!কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সঙ্গে ভেসে আসে ‘নিপাত যাক ধর্মীয় প্রজাতন্ত্র’ স্লোগানও।
সরকারের কট্টরপন্থী নীতি ঘিরে বহু দিন ধরেই উত্তপ্ত পরিবেশ ইরানে। যাতে ইন্ধন জুগিয়েছে গত বছর থেকে শুরু হওয়া হিজাব-বিরোধী আন্দোলন এবং তা রুখতে প্রশাসনের কড়া মনোভাব। এই প্রসঙ্গে এক মানবাধিকার সংগঠনের তরফে জানানো হয়, শুক্রবার পর্যন্ত যা পরিসংখ্যান তাতে উঠে এসেছে, ৫২৮ জন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়েছে ইতিমধ্যেই। যার মধ্যে রয়েছে ৭১জন অপ্রাপ্তবয়স্কও। গ্রেফতার করা হয়ছে ১৯,৭৬৩ জনকে।
অন্য দিকে, সম্প্রতি শীর্ষনেতা আয়াতোল্লা খামেনেই নির্দেশ দেন যে হিজাব আন্দোলনে ধৃতদের কয়েক-সহ একাধিক বন্দিকে ‘ক্ষমা’ করে দেওয়া হবে। সেই মতো শুক্রবারই ছাড়া পেয়েছেন বেশ কয়েক জন। তবে তাদের মনোভাব নিয়ে অতীব ক্ষুণ্ণ জনতার মন পেতে এই সরকারের এই পদক্ষেপে কি আদৌ কোনও লাভ হয়েছে? প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের মাঝে সরকার-বিরোধী আন্দোলনকারীদের এই সাহসী ‘কীর্তির’ কথা মনে করিয়ে দিয়ে নেটমাধ্যমে সেই প্রশ্ন উস্কে দিয়েছেন অনেকেই।