এত কম বেতনে চলে কী করে। মাস গেলে মাত্র ২০ হাজার ৫০০ টাকা। পদটা তো হেলাফেলার নয়। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। ভাইস চেয়ারম্যানের মাইনে আরও অনেক কম। ১৪ হাজার ৫০০। জনসাধারণের সেবা করা মানে, নিশ্চয়ই না খেয়ে মরা নয়। সরকারের টনক নড়েছে। বেতন দ্বিগুন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভ্রমণ ভাতা, অন্যান্য সুযোগ সুবিধেও দেওয়া হবে। স্বস্তিতে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানরা। তাঁদের খুশি হওয়ার আরও কারণ আছে। ক্ষমতা বাড়ছে। আইন সংশোধনে, ইউএনও বা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার ডানা ছাঁটা হচ্ছে। তাঁরা থাকবেন সচিব হয়ে। উন্নয়ন কাজের সিদ্ধান্ত নেবেন চেয়ারম্যান। ইউএনও-র কিছু করার থাকবে না। নীতিগত ব্যাপারে নাক গলাতে পারবেন না ইউএনওরা। সরকারি আমলা হিসেবে কাজ রূপায়ণের দিকে শুধু লক্ষ্য রাখবেন।
নতুন আইনে সব ক্ষমতা চলে যাবে জনপ্রতিনিধিদের হাতে। ক্ষমতার বিভাজনটা হবে অনেকটা পশ্চিমবঙ্গের মতো। নির্বাচিত জেলা সভাধিপতি যেমন নীতি গ্রহণের দায়িত্ব নেন, তার রূপায়ণের ভার নেন জেলাশাসক। নীচের তলায় বিডিও বা ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারের চেয়ে অঞ্চল প্রধানের ক্ষমতা বেশি।
বাংলাদেশেও এ বার উপজেলা স্তর পর্যন্ত সরকারি আমলাদের থেকে বেশি ক্ষমতাধর হতে চলেছেন জনপ্রতিনিধিরা। গণতন্ত্রের নতুন যাত্রা। মানুষই ঠিক করবে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে কারা কাজ করবে। পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করে তারা ক্ষমতায় বসাবে। আমলারা জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশে কাজ করবে।
উপজেলায় সাংসদদের খবরদারিও বন্ধ হবে। তাঁরা যদি মনে করেন, যেহেতু তাঁরা সংসদ সদস্য তাঁদের ক্ষমতা আছে উপজেলাতেও হাত লম্বা করা, সেটা হবে না। উপদেষ্টা হিসেবে তাঁদের ভূমিকাটা কেটে ফেলা হবে। এ নিয়ে আপত্তি আছে। স্থানীয় সরকারকে এতটা ক্ষমতা দেওয়ায় প্রতিবাদ উঠেছে। যাঁরা এতদিন ক্ষমতা আঁকড়ে ছিলেন, তাঁরা সরে দাঁড়াতে চান না। আইনের চূড়ান্ত খসড়ায় জানা যাবে, উপজেলায় কার ক্ষমতা কতখানি হবে।
আইনের প্রাথমিক খসড়ায় ঠিক হয়েছে, কালভার্ট থেকে রাস্তা নির্মাণ, কর্মী নিয়োগ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স দেওয়া সবেতেই চেয়ারম্যানের অগ্রাধিকার বজায় থাকবে। প্রশাসনিক নয়, রাজনৈতিক অধিকার বৃদ্ধি পাবে। এতে বাংলাদেশ সরকারের ইচ্ছেটা স্পষ্ট। তারা সরকারি কর্মচারীদের ক্ষমতা কমাচ্ছেন। উপজেলা থাকবে মানুষের নিয়ন্ত্রণে। উপজেলা স্বাধীনতাও পাবে বেশি। বাইরে থেকে ক্ষমতা আরোপ করা যাবে না। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের নতুন ধারায় অসন্তোষ তাঁদের মধ্যেই, যাঁরা এতদিন ক্ষমতা ভোগ করছিলেন। তাঁরা নতুন আইনের বিরোধিতা করছেন। যুক্তি দেখাচ্ছেন, উপজেলা পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক দক্ষতা, অভিজ্ঞতা দরকার। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যদি সঠিক প্রশাসনিক সহযোগিতা না পান, তাহলে মুশকিলে পড়বেন। সেখানেও জবাব পরিষ্কার- প্রশাসন থাকবে, তবে চেয়ারম্যানের মাথায় চড়তে পারবে না।
আরও পড়ুন:
বাঁশখালীর ঘটনা অনভিপ্রেত, মানুষকে আগে বোঝানোর দরকার ছিল বাংলাদেশ সরকারের