George Floyd

সাইমন লেগ্রিরা এখনও মেরে ফেলে টমদের

ভারতে থাকাকালীন সংবাদপত্রে সংখ্যালঘুর সমস্যার খবর পড়লেও জন্মসূত্রে পাওয়া পদবির দৌলতে সংখ্যাগুরুর সুবিধা পাওয়া আমি কখনওই বিষয়টির যথাযথ গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারিনি।

Advertisement

সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়

ডেট্রয়েট শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২০ ০৭:১০
Share:

জর্জ ফ্লয়েডের উপর পুলিশি অত্যাচারের সেই দৃশ্য। ফাইল চিত্র।

ছোটবেলায় ‘আঙ্কল টম’স কেবিন’ উপন্যাসটি পড়ার পরে গায়ের রঙও যে মানুষের জীবনে কী রকম নরকযন্ত্রণার কারণ হয়ে উঠতে পারে, সেই বিষয়ে প্রথম একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল। খলনায়ক, দাস ব্যবসায়ী ‘সাইমন লেগ্রি’র চরিত্রটি আমার কিশোর মনে যথেষ্ট ছাপ ফেলেছিল। প্রশ্ন জেগেছিল, উপন্যাসে যা রয়েছে তা কি নিছক কল্পনা, না বাস্তব? অতীত, নাকি পুরোদস্তুর বর্তমান? সেই প্রশ্নের উত্তর পেলাম সম্প্রতি, কয়েক দিন ধরে চলতে থাকা বর্ণবিদ্বেষ-বিরোধী আন্দোলন চোখের সামনে দেখে।

Advertisement

আফ্রো-মার্কিন জনগোষ্ঠীর শতাংশের বিচারে আমেরিকায় এক নম্বরে থাকা শহর ডেট্রয়েটে এসে জীবনের বিভিন্ন পরিসরে আফ্রো-মার্কিন ও শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর ভেতর ‘আমরা-ওরা’র বিভেদ চোখে পড়েছে। এই বিভেদ অনুচ্চারিত, কিন্তু প্রকট। শ্বেতাঙ্গ বন্ধুর কাছে শুনেছি, কী ভাবে ট্রাফিকে লালবাতি না-মানায় পুলিশের টহলদার গাড়ি তাঁর গাড়ি থামালেও শুধু ‘ওয়ার্নিং’ দিয়ে ছেড়ে দেয়। অন্য দিকে, এক কৃষ্ণাঙ্গ বন্ধুর কাছে শুনেছি রাতে নিজের গাড়িতে বসে থাকার ‘অপরাধে’ পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। দেখেছি, সপ্তাহান্তের ভারতীয় আড্ডায় আফ্রো-মার্কিনদের বিভিন্ন আপত্তিকর শব্দে ডাকা হয়েছে, এবং তাঁদের সব অপরাধের ‘কারণ’ হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভারতে থাকাকালীন সংবাদপত্রে সংখ্যালঘুর সমস্যার খবর পড়লেও জন্মসূত্রে পাওয়া পদবির দৌলতে সংখ্যাগুরুর সুবিধা পাওয়া আমি কখনওই বিষয়টির যথাযথ গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারিনি। কিন্তু আমেরিকায় এসে মনে হয়েছে, সংখ্যা ও গায়ের রঙের বিচারে আমি আফ্রো-মার্কিনদের কাছাকাছি, এখানে আমিই সংখ্যালঘু। তাই নিজের তাগিদে ডেট্রয়েটের বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলন সমর্থন করছি। বাড়ির সামনে দিয়ে হাজার হাজার মানুষের মিছিল, রাস্তা জুড়ে অবরোধ, শহরের প্রধান রাস্তা জুড়ে বসে বর্ণবিদ্বেষ-বিরোধী গানবাজনা, এ সব কিছুই আশা জোগাচ্ছে। ভাল লাগছে যখন দেখছি কিশোর থেকে বয়স্ক মহিলা, সবাই আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন। মূলত কমবয়সি শ্বেতাঙ্গ মার্কিনদেরও আন্দোলনে যোগ দিতে দেখছি। কার্ফু অমান্য করে রোজ পথে হাঁটছে প্রতিবাদী মানুষের দল। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বর্ণবিদ্বেষ-বিরোধী বিবৃতি জারি করা হচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: এইচ-১বি ভিসা বন্ধের পথে ট্রাম্প?

এই বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলনের প্রয়োজন ছিল। কারণ সাইমন লেগ্রিরা তো বইয়ের পাতা থেকে এখনও উঠে আসে ঘোর বাস্তবে। মেরে ফেলে ‘আঙ্কল টম’দের।

(লেখক ভাইরোলজির গবেষক)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement