জন বন্টনের সেই বই
এ বার বই-বোমা! দ্বিতীয় বার হোয়াইট হাউসের দৌড়ে নামার আগে ফের বিপাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভোটে জিততে এ বার তিনি চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের শরণ নিয়েছেন বলে দাবি করলেন ট্রাম্পেরই প্রাক্তন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন। মৌখিক দাবি নয়, বই লিখেছেন বল্টন— ‘দ্য রুম হোয়্যার ইট হ্যাপেন্ড: আ হোয়াইট হাউস মেময়্যার’।
ইতিমধ্যেই বিশ্বের বহু স্টলে পৌঁছে গিয়েছে সেই বইয়ের কপি। ২৩ জুন প্রকাশ হওয়ার কথা। কিন্তু কাল কিছু সংবাদমাধ্যমে বইটির অংশবিশেষ ছাপা হতেই শুরু হয়েছে হইচই। বই প্রকাশ আটকাতে মাঠে নেমেছে মার্কিন বিচার বিভাগও। আর ট্রাম্প বলছেন, ‘‘বল্টন মিথ্যাবাদী। লোকটাকে হোয়াইট হাউসের সবাই ঘৃণা করে। অনুমতি ছাড়াই যে সব কথা উনি বলে বেড়াচ্ছেন, তা অত্যন্ত গোপনীয়।’’
সূত্রের খবর, বইটির পাণ্ডুলিপি এখনও রিভিউ কমিটির কাছে আটকে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান এবং সিনিয়র ও জুনিয়র বুশের আমলে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে আসা বল্টন তবু নাছোড়ই। বইয়ে লিখেছেন, ‘‘কী ভাবে হোয়াইট হাউস চালাতে হয়, তিনি (ট্রাম্প) এখনও অজ্ঞ।’’ ব্রিটেন যে পরমাণু শক্তিধর দেশ, আর ফিনল্যান্ড কোনও ভাবেই রাশিয়ার অংশ নয়— ট্রাম্প নাকি এটাও বহু দিন জানতেন না বলে দাবি করেছেন বল্টন।
রুশ মদতেই ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে এসেছিলেন কি না, সেই বিতর্ক এখনও মেটেনি। আগামী নভেম্বরেই ফের ভোট । তার আগেই বল্টন তাঁর ৫৭৭ পাতার বইয়ে দাবি করেছেন, গত বছর জুনে জাপানের ওসাকায় জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে একান্তে বসেছিলেন শি-ট্রাম্প। এবং বিস্ময়কর ভাবে ট্রাম্প গোড়াতেই আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দেন ভোটের দিকে।
গত নির্বাচনে ট্রাম্পের জেতার পিছনে কৃষিজীবী অংশের একটা বড় ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হয়। এ বারও সেই জোরটা ধরে রাখতে, ট্রাম্প চিনের কাছে মার্কিন কৃষিপণ্য বিক্রি করতে চেয়েছিলেন বলেও দাবি তাঁর। আর শি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে কৃষিপণ্যে অগ্রাধিকার দেওয়া নিয়ে রাজি হতেই ট্রাম্প তাঁকে শংসাপত্র দেন ‘চিনা ইতিহাসের সেরা নেতা’ বলে। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটিজার বিষয়টিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। স্টেট ডিপার্টমেন্ট এখনও মুখ খোলেনি।
গত বছর এপ্রিলে নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে যোগ দিয়েছিলেন বল্টন। সেপ্টেম্বরেই পদ ছাড়তে হয়। বল্টনের দাবি, তিনি নিজে চাকরি ছেড়েছিলেন। আর ট্রাম্পের দাবি, তিনিই বরখাস্ত করেছিলেন। মাঝে বেশ কিছু দিন চুপ থাকার পর বল্টন ফের সরব। প্রাক্তন এই নিরাপত্তা উপদেষ্টার দাবি, ওসাকায় ট্রাম্প উইঘুরের চিনা শিবিরের প্রতিও সমর্থন জানিয়েছিলেন। যদিও বল্টনের এই দাবির সঙ্গে উইঘুর নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের মন্তব্য বা পদক্ষেপের তেমন মিল নেই বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। অন্য একটা অংশ অবশ্য চিন-মার্কিন সখ্যকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তা সে করোনা নিয়ে ট্রাম্প যতই বেজিংয়ের দিকে আঙুল তুলুক না কেন! এই যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লাদাখে সংঘর্ষ নিয়ে চিন ও ভারতের মধ্যে কোনও মধ্যস্থতা করতে চাইছেন না, এর পিছনেও বন্ধুত্বের অঙ্ক কাজ করছে বলেই মনে করছেন অনেকে।