যুদ্ধের আগে রাশিয়া থেকে বড়জোর ০.২% জ্বালানি আমদানি করত এ দেশের তেল সংস্থাগুলি। মার্চ পর্যন্ত তার পরিমাণ ছিল দৈনিক ৯,০৯,৪০৩ ব্যারেল। প্রতীকী ছবি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আমেরিকা-সহ পশ্চিম বিশ্ব মস্কোর উপরে বিভিন্ন রকমের নিষেধাজ্ঞা চাপালেও ভারত এখনও পর্যন্ত তার তোয়াক্কা করেনি। সস্তা দামের সুযোগ নিয়ে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ থেকে তেল আমদানি বাড়িয়েই চলেছে দিল্লি। যা নিয়ে ক্রমাগত সরব হচ্ছে বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। এই অবস্থায় অস্ট্রিয়া সফরে গিয়ে ফের এ ব্যাপারে অবস্থান স্পষ্ট করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, ইউরোপের মাথাপিছু আয় অনেক বেশি। অথচ গত ফেব্রুয়ারি থেকে তারা ভারতের তুলনায় ছ’গুণ রুশ তেল আমদানি করেছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে যে কমিয়েছে এমনটাও নয়। ফলে তুলনায় কম মাথাপিছু আয় নিয়ে কম দামি তেলের সুযোগ ভারতকে নিতেই হবে।
যুদ্ধের আগে রাশিয়া থেকে বড়জোর ০.২% জ্বালানি আমদানি করত এ দেশের তেল সংস্থাগুলি। মার্চ পর্যন্ত তার পরিমাণ ছিল দৈনিক ৯,০৯,৪০৩ ব্যারেল। আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলি মস্কোর উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পরে ভারতের মতো আমদানিকারীদের জন্যে তেলের দাম কমিয়ে দেয় রাশিয়া। পশ্চিমী দুনিয়ার সমালোচনা সত্ত্বেও সেই সুবিধা নিতে পিছপা হয়নি দিল্লি। ফলে সে দেশ থেকে জ্বালানির আমদানি বাড়াতে থাকে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। এখন ইরাক, সৌদি আরবের মতো দেশকে ছাপিয়ে ভারতের বৃহত্তম তেল রফতানিকারী দেশ রাশিয়া। আমদানিকৃত মোট তেলে রাশিয়ার অংশীদারি এক-পঞ্চমাংশের বেশি। ইউরো অঞ্চলের দেশগুলি অবশ্য আগের থেকে রুশ তেলের আমদানি কিছুটা কমিয়েছে।
মঙ্গলবার অস্ট্রিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টিভি চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘ইউরোপ এমন ভাবে আমদানি কমিয়েছে, যাতে তারা নিজেরা স্বচ্ছন্দ বোধ করে। মাথাপিছু ৬০,০০০ ইউরোর জনগণের প্রতি আপনারা এতটাই যত্নশীল। আর আমাদের মাথাপিছু আয় সেখানে ২০০০ ইউরো। আমাদেরও জ্বালানি প্রয়োজন। আর আমরা বেশি দাম দেওয়ার অবস্থায় নেই।’’
উল্লেখ্য, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার তেলের দামের ঊর্ধ্বসীমা ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলারে বেঁধে দিয়েছে। সূত্রের খবর, এর পর থেকে ভারত মস্কোর থেকে তেল পাচ্ছে তার চেয়েও কিছুটা কম দামে। সমালোচনার জবাব দিতেই এ দিন জয়শঙ্করের স্পষ্ট বার্তা, ‘‘যদি বিষয়টা নীতিরই হয়, তা হলে ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকেই ইউরোপ মস্কোর জ্বালানি আমদানি কমাল না কেন?...আসলে ইউরোপ যা করছে, তার ফলে পশ্চিম এশিয়া থেকে তেলের উৎপাদন সরে যাচ্ছে। তেলের দাম বেড়ে চলেছে। তাতে আন্তর্জাতিক জ্বালানির বাজারেও বাড়ছে চাপ।’’