রাত থেকেই বাড়িতে বন্দি, চমকে উঠছি মাঝে-মধ্যেই!

এত ভয় আমি গোটা জীবনে পাইনি। একের পর এক নিহতের সংখ্যা বাড়ছে, আর মনে হচ্ছে ওর মধ্যে তো আমিও থাকতে পারতাম! বা আমার ছেলে-মেয়ে! নিকটাত্মীয় কেউ! বন্ধু, আত্মীয়! যত বার এটা মনে হচ্ছে, তত বারই চমকে চমকে উঠছি।

Advertisement

পার্থপ্রতিম মজুমদার

প্যারিস শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৫ ১৫:৫৩
Share:

লেখক প্রখ্যাত মূকাভিনেতা। জন্ম বাংলাদেশের পাবনায়। ১৯৫৪ সালে। গত সাড়ে তিন দশক ধরে থাকেন প্যারিসে। ফরাসি সরকারের সর্বোচ্চ সাংস্কৃতিক সম্মান ‘নাইট অব দ্য অর্ডার অব আর্টস অ্যান্ড লেটার্স’ পেয়েছেন ২০১১ সালে। পেয়েছেন বাংলাদেশের ‘একুশে পদক’।

Advertisement

এত ভয় আমি গোটা জীবনে পাইনি। একের পর এক নিহতের সংখ্যা বাড়ছে, আর মনে হচ্ছে ওর মধ্যে তো আমিও থাকতে পারতাম! বা আমার ছেলে-মেয়ে! নিকটাত্মীয় কেউ! বন্ধু, আত্মীয়! যত বার এটা মনে হচ্ছে, তত বারই চমকে চমকে উঠছি। আমি থাকি মূল শহর থেকে একটু দূরে, ম্যাসি প্যালেজোতে। মূল ঘটনাস্থল থেকে মেট্রোয় মিনিট কুড়ি লাগে। অত দূর থেকেও বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পেয়েছি।

প্যারিসে শুক্রবারের রাত মানেই, আনন্দ আর উত্সবের রাত। এখানে মানুষ যেমন সারা সপ্তাহ ধরে খাটতে পারে, তেমন সপ্তাহান্তে উদ্দাম আনন্দেও মেতে ওঠে। কাজেই, রাত সাড়ে আটটা নাগাদ যে পটকা ফাটার আওয়াজটা পেয়েছিলাম, সেটাকে ওই সপ্তাহান্তিক আনন্দের অংশ হিসেবেই উড়িয়ে দিয়েছিলাম। গুরুত্ব দেওয়ার কোনও কারণও ছিল না। কিন্তু কয়েক মুহূর্ত পরে ছেলে জানাল, গোটা শহরটা ভয়াবহ সন্ত্রাসের কবলে পড়েছে। তখন তো মাত্র ১৮ জনের প্রাণহানির খবর এসেছিল। সেই সংখ্যাটা শতাধিক হতে পারে তখন আমাদের কাছে কোনও আভাস ছিল না।

Advertisement

ঘড়ির কাঁটা সাড়ে তখন সাড়ে ১০টা ছুঁয়েছে। ছেলে এবং মেয়ে বাড়িতে ফিরেছে ঘণ্টাখানেক আগে। ছেলের সঙ্গে ওর এক বান্ধবীও এসেছে। রাতের খাওয়াদাওয়ার পর ওরা পাশের ঘরে একটা ‘হরর ফিল্ম’ দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমনিতে রাতের খবর টেলিভিশনে সাড়ে আটটার মধ্যেই দেখা হয়ে যায়। কিন্তু, মেয়ের ট্যাবে হঠাত্ খবরটা ফুটে ওঠে। সেটা দেখেই ও আমাকে জানায়। একটা ২৪ ঘণ্টার নিউজ চ্যানেল খুলে দেখি, হতের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। মাঝ রাতে প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁকেও টেলিভিশনে বক্তব্য রাখতে দেখলাম। দেশবাসীকে তিনি নিরাপত্তা আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু, শহরের ছবি দেখে সেই আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে মন চাইছিল না। তবু, তিনি এমন উন্নত একটা দেশের প্রেসিডেন্ট! ভরসা তো শেষমেশ কোথাও একটা রাখতেই হবে!

কাল রাত থেকেই বারে বারে প্রশাসনের তরফে ঘোষণা করা হচ্ছে, কেউ যেন গুরুত্বপূর্ণ কোনও কাজ না থাকলে বাড়ি থেকে না বেরোন। এমনকী, গাড়ি বের করতেও চরম নিষেধাজ্ঞা। রাত থেকেই বাড়িতে প্রায় বন্দি হয়ে রয়েছি। গোটা দুনিয়া থেকে শুভাকাঙ্খীরা ফোন করছেন। জানতে চাইছেন, কেমন আছি? সারা রাত চোখে এক মুহূর্তের জন্য ঘুম আসেনি। স্ত্রী-রও একই অবস্থা। এমন উন্নত একটা দেশে এতটা নিরাপত্তার অভাব বোধ করতে হবে, কখনও ভাবিনি। এ তো যখন ইচ্ছে, যা খুশি হয়ে যেতে পারে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement