ইয়েতি নিয়ে রয়েছে নানা মিথ, নানা রহস্য। গল্প কমিকসও পিছিয়ে নেই। ‘তিব্বতে টিনটিন’ তার প্রমাণ। জনপ্রিয় কমিক সিরিজের একটি পর্বে ইয়েতির উল্লেখ ছিল। কিন্তু সত্যি সত্যিই ইয়েতিকে নিয়ে কী কী ঘটনার কথা জানা গেল।
তিব্বতে টিনটিনে বলা হয়েছিল, ইয়েতিকে এমন একটি জীব হিসেবে যা মানুষের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য নকল করতে পারে। টিনটিনকে দেখে নাকি তেড়ে এসেছিল। গল্পে ইয়েতি কেবল পাহাড়ি কোনও জন্তু নয়, বরং মানুষের মতো মন রয়েছে এমন একটি প্রাণী। তবে নানা দেশের অভিযাত্রীরা কী বলেছেন এ নিয়ে?
আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বে সিন্ধুসভ্যতা জয় করে জানতে চেয়েছিলেন ইয়েতি সম্পর্কে, ইতিহাসবিদরা বলছেন এমনটাই।
টিনটিন তো সাংবাদিক ছিল, তবে বইয়ের পাতায়। ১৯২১ সালে ব্রিটিশ সাংবাদিক হেনরি নিউম্যান এক দল ব্রিটিশ অভিযাত্রীর সাক্ষাৎকার নেন। অভিযাত্রীরা তাঁকে বলেন, হিমালয়ের কোলে বিশালাকার পায়ের ছাপ দেখেছিলেন তাঁরা। নিউম্যানই প্রথম ‘অ্যাবোনিমেবল’ শব্দটা বলেন।
গবেষক মাইরা শ্যাকলে ‘স্টিল লিভিং? ইয়েতি সাসকোয়াৎচ, অ্যান্ড দ্য নিয়ানডারথাল এনিগমা’-তে বলেন, ১৯৪২ সালে দু’জন অভিযাত্রী বিশালাকার কোনও প্রাণী দেখেছিলেন, তবে তাঁর রঙ কালো।
কিংবদন্তি অভিযাত্রী রেনহোল্ড মেজনার নেপাল ও তিব্বতে গিয়ে ‘মাই কোয়েস্ট ফর দ্য ইয়েতি: কনফ্রন্টিং দ্য হিমালয়াজ ডিপেস্ট মিস্ট্রি’তে লেখেন বড় ভাল্লুককেই আসলে ইয়েতি বলে ভুল করেন অনেকে।
১৯৮৬ সালের মার্চে হিমালয়ের অভিযাত্রী অ্যান্টনি উলড্রিজ, প্রায় ৫০০ ফুট দূরত্ব থেকে ইয়েতি দেখেছেন বলে দাবি করেছেন। বরফের উপর অদ্ভুত ছাপের কথাও বলেন তিনি। দুটি ছবিও তোলেন। (প্রতীকী ছবি)
স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের প্রাইমেট বায়োলজির অধিকর্তা অ্যানাটমিস্ট, নৃতত্ত্ববিদ জন নেপিয়ার বলেন, বরফের ছায়াকে ভুল দেখেছেন অভিযাত্রী। (প্রতীকী ছবি)
১৯৬০ সালে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করা প্রথম অভিযাত্রী স্যর এডমন্ড হিলারি ইয়েতি খুঁজতেই একটি অভিযানে যান। একটি জন্তুর মাথার খুলিও নিয়ে আসেন। তবে বিজ্ঞানীরা পরবর্তীতে বলেন, এটি আদৌ ইয়েতিরই নয়। হেলমেট আকারের ঢাকনার মতো দেখতে, হিমালয়ের পার্বত্য এলাকার ছাগলের মতো এক প্রাণীর।
২০০৭ সালে আমেরিকার এক টিভি সঞ্চালক জোস গেটসও রহস্যময় পায়ের ছাপের কথা বলেন। কিন্তু মেলেনি প্রমাণ। ২০১০ চিনের অভিযাত্রীরা একটি প্রাণীকে পাকড়াও করেন। সেগুলিকে সিভেট বা ভামজাতীয় বিড়াল বলে শনাক্ত করা হয়।
নেপালের একটি বৌদ্ধমঠে আঙুল মেলে একটি, দাবি করা হয় এটি নাকি ইয়েতির আঙুল। এডিনবার্গ চিড়িয়াখানায় ২০১১ সালে গবেষকরা এটি পরীক্ষা করেন। পরবর্তীতে ডিএনএ পরীক্ষা করে জানা যায়, সেটিও বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর মৃতদেহের অংশ। (প্রতীকী ছবি)
২০১৩ সালে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানী ব্রায়ান সাইকস, ইয়েতির রোম হিসাবে দাবি করা একটি নমুনা থেকে ডিএনএ পরীক্ষা করেন। বেশিরভাগ পরীক্ষাই বলছে, এগুলি গরু, ঘোড়া ও ভাল্লুকের। এক দল গবেষক বলেন, ৪০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার বছর আগের প্লিস্টোসিন যুগের ভাল্লুকের ডিএনএ এটি।
বিজ্ঞানী রোনাল্ড এইচ পাইন ও ইলিসের ই গিতেরেজ বলেন, সাধারণ বাদামী ভাল্লুকের ডিএনএ ছিল এটি। ইয়েতির নমুনা বলে দাবি করা ডিএনএ আসলে এশীয় ভাল্লুক, হিমালয়ের ভাল্লুক, তিব্বতীয় ভাল্লুক ও কুকুরের। তাই টিনটিন গল্পে দেখা পেলেও বাস্তবে প্রমাণ এখনও মেলেনি।
বাঙালি অভিযাত্রী, পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, তিনি ইয়েতিজাতীয় কোনও প্রাণী কখনওই দেখেননি, এ জাতীয় মিথের কথা শুনেছেন যদিও।
বরফে ঢাকা হিমালয়ের বুকে কি এবার সত্যিই ইয়েতির সন্ধান মিলল? আজ ভারতীয় সেনার অভিযাত্রী দলের তরফে টুইট করা ছবি দেখে এমনটাই জল্পনা শুরু হয়েছে।