গলছে গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহ। ছবি: এএফপি।
বরফের রাজ্য। গ্রিনল্যান্ড বললে এই ছবিটাই ভেসে ওঠে। যদিও সে ধারণা বদলে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
পুকুরে টলটলে জল। ফুলে-ফেঁপে ওঠা নদী। দাবানলে পুড়ছে জঙ্গল। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ধারেকাছেও নেই। কোথাও কোথাও ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গলছে হিমবাহ। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হচ্ছে গ্রিনল্যান্ডের এমনই সব ছবি। কৃত্রিম উপগ্রহের পাঠানো ছবিতেও ধরা পড়েছে দাবানলের ভয়াবহতা।
সপ্তাহ খানেক আগেই আবহবিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, ইউরোপের তাপপ্রবাহ এ বার গ্রিনল্যান্ডমুখী। সে ক্ষেত্রে তীব্র গরমে বিপজ্জনক ভাবে গলতে শুরু করবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিমবাহ। সেটাই শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহের গোড়া থেকে ভয়াবহ ভাবে গলতে শুরু করেছে বরফের সেই চাদর। অনুমান করা হচ্ছে হিমবাহের অন্তত ৬০ শতাংশে এর প্রভাব পড়বে।
ড্যানিশ মেরু গবেষণা সংস্থার ওয়েবসাইট ‘পোলার পোর্টাল’-এ দাবি করা হয়েছে, ২০১২-র পর থেকে এ পর্যন্ত সমীক্ষা অনুযায়ী, ৩১ জুলাই তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ছিল। হিমবাহ সব চেয়ে বেশি গলেছে ওই দিন। বরফের চাদরের ৬০%-রও বেশি এলাকা জুড়ে হিমবাহের উপরিভাগের ১ মিলিমিটার স্তরে বরফ গলতে দেখা গিয়েছে। যার ফলাফল, ঘণ্টায় অন্তত ১ হাজার কোটি টন বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রে মিশেছে। ডেনমার্কের আবহাওয়া সংস্থার বিশেষজ্ঞ রুথ মোটরামের দাবি, জুলাই মাসে ওই হিমবাহ থেকে অন্তত ১৯,৭০০ কোটি টন জল আটলান্টিকে গিয়ে মিশেছে। মার্টিন স্টেনডেল নামে আর এক বিজ্ঞানীর দাবি, ওই পরিমাণ জলে এক মাসে সমুদ্রতল আনুমানিক ০.১ মিলিমিটার বাড়বে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আপাতদৃষ্টিতে ফারাকটা খুব অল্প মনে হতে পারে, কিন্তু প্রভাব ভয়াবহ হবে। যেমন ঝড়ঝঞ্ঝার সংখ্যা বাড়বে। উপকূল এলাকাগুলো বন্যায় ডুবে যাবে। ‘কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস’-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত এ বছরের জুলাই মাসে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা সব চেয়ে বেশি ছিল। প্রতি মাসে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যা থাকে, জুলাই মাসে তার থেকে ২.১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস তথ্যগুলি তুলে ধরে জানিয়েছেন, কার্বন নিঃসরণ কমাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। হাতে আর সময় নেই।