নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ আলি। ইথিওপিয়ার প্রতিবেশী দেশ ইরিট্রিয়ার সঙ্গে দুই দশকের গৃহযুদ্ধ অবসানে তাঁর ইতিবাচক ভূমিকাকেই কুর্নিশ জানাল নোবেল কমিটি।
এদিন অসলো থেকে সাংবাদিক বৈঠকে প্রাপক হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করে সচিব বিয়ার্ত্র অ্যান্ডারসন বলেন, ‘‘সামাজিক ন্যায়, ঐক্য স্থাপনে আবি আহমেদের ভূমিকা অতুলনীয়। তাই পুরস্কৃত করা হচ্ছে তাঁকে।’’
এখনও ইথিওপিয়া ইরিট্রিয়ার মধ্যে শান্তি ফেরেনি। তবে দুই দশকের অশান্তি পেরিয়ে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে হওয়া শান্তিচুক্তি দুই দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপনের সম্ভাবনা অনেকটা তরান্বিত করেছে। বিয়ার্ত্র অ্যান্ডারসন জানাচ্ছেন, অনেকে বলতে পারেন, আবি আহমেদকে তড়িঘড়ি পুরস্কার দেওয়া হল। তবে তাঁর উদ্যোগকে সম্মান জানাতেই হয়। তিনি তাঁর উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ‘‘রোমও একদিনে তৈরি হয়নি।’’
দেখুন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীর অফিসের টুইট:
১৯৯৩ সালে ইরিট্রিয়া স্বাধীনতা অর্জন করে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইথিওপিয়া থেকে। কিন্তু ইরিট্রিয়ার সীমান্তবর্তী বাদমে অঞ্চলের দখল নিয়ে গত ২০ বছর ধরে ইরিট্রিয়া ও ইথিওপিয়ার মধ্যে সম্পর্ক চূড়ান্ত খারাপ। বারবার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রাণ গিয়েছে দু’ পক্ষেরই ৭০ হাজারের বেশি মানুষের। ক্রমেই মেরুদণ্ড ভেঙেছে দুই দেশের অর্থনীতির। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ক্ষমতায় এসেই আবি আহমেদ আলি প্রথমেই সচেষ্ট হন ইরিট্রিয়ার সঙ্গে হিংসা অবসানে। একই সঙ্গে চলতে থাকে অর্থনৈতিক সংস্কারের কাজ।
প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যে আবি আহমেদ দেখা করেন ইথিওপিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান ইসআইআস আফওয়েরকির সঙ্গে। শুরু হয় সীমান্ত সমস্যা নিয়ে মত বিনিময়। সদর্থক আলোচনার শেষে দুই দেশের প্রধান ২০১৮ সালের ৯ জুলাই একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেন। আবি আহমেদ বাদমে অঞ্চলকে ইরিট্রিয়ার হাতেই সমর্পণ করেন। স্থির হয়, দুই দেশের মানুষ, পণ্য ও অন্যান্য পরিষেবার জন্যে সীমান্ত খুলে দেবে উভয় পক্ষই। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত অনেকটাই বদলে দিয়েছে দুই দেশের সম্পর্ক। হিংসার পরিমাণ কমায় অর্থনৈতিক উন্নয়নেও নজর দিতে পেরেছেন আবি। শুধু ইরিট্রিয়াই নয়, অন্য দেশগুলির সঙ্গেও যোগাযোগ করে দীর্ঘদিনের সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছেন ইথিওপিয়ান প্রধানমন্ত্রী। সৌদি আরব গিয়ে বন্দি প্রত্যর্পনের বিষয় নিশ্চিত করেছেন। শান্তি বিষয়ক আলোচনা সেরেছেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফতেহ এল সিসির সঙ্গে।
আরও পড়ুন:পাশে বসিয়ে বিশ্বতত্ত্বের ‘ঠাকুরদা’ বললেন, ‘খুঁজলে, বিগ ব্যাংয়ের আঁচ এখনও মিলবে’
আরও পড়ুন:রিচার্জ করার ব্যাটারি এনে নোবেল রসায়নে
গোটা বিশ্বই মনে করেছিল এই বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে চলেছে ১৬ বছর বয়েসি পরিবেশ আন্দেলনকারী গ্রেটা থুনবার্গ। তবে সামগ্রিক অবদানের নিরিখে শেষ বিচারে আবি আহমেদকেই বেছে নিল নোবেল কমিটি।