আপৎকালীন চিকিৎসা চলছে ভূমিকম্পে আহতদের। সোমবার জাভার সিয়ানজুরে। পিটিআই
৪৬, ৫৬, ১৬২...। আজ প্রবল ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভা প্রদেশ। ঘণ্টায় ঘণ্টায় লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সর্বশেষ খবর, অন্তত ১৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম ৭০০-রও বেশি। অসংখ্য বাড়ি ভেঙে পড়েছে। বেশ কিছু অঞ্চলে ধস নেমেছে। বিদ্যৎহীন বহু এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হাসপাতালগুলিও। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসা চলছে খোলা আকাশের নীচে।
এ দিন স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে ১৫-তে হওয়া ওই কম্পনের তীব্রতা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৬। কম্পনের উৎস ছিল রাজধানী জাকার্তা থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে পশ্চিম জাভার সিয়ানজুরে। মাটির নীচে কম্পনের গভীরতা খুব বেশি ছিল না। কিন্তু তার প্রভাব পড়েছে ভয়াবহ। আমেরিকার জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, কম্পনের কেন্দ্র ছিল সিয়ানজুর অঞ্চলে মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে। এই অঞ্চলের চারটি স্কুল, ৫২টি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর (বিএনপিবি) জানায়, সুনামির কোনও আশঙ্কা নেই।
ভূমিকম্পের জেরে বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত বহু জায়গায়। যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। আশঙ্কা, ভগ্নস্তূপের নীচে চাপা পড়ে রয়েছেন অনেকে। পশ্চিম জাভার গভর্নর রিদওয়ান কামিল সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘দেখতেই তো পাচ্ছেন কী অবস্থা! এখনও অনেকে ধ্বংসাবশেষের নীচে চাপা পড়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু বা জখমের সংখ্যা বাড়বেই।’’ সিয়ানজুর প্রশাসনের প্রধান হারমান সুহারমান জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যার আপাতত যা হিসেব পাওয়া গিয়েছে, তা হাসপাতাল থেকে। বেশির ভাগ মৃত্যুই ঘটেছে, ভেঙে পড়া বাড়ির নীচে চাপা পড়ে। হারমান জানিয়েছেন, শহরের সায়াং হাসপাতাল ভূমিকম্পের জেরে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। ফলে জরুরী চিকিৎসা পরিষেবা দিতে পারছেন না ডাক্তাররা। যে সংখ্যক মানুষ জখম হয়েছেন, তা সামলানোর মতো স্বাস্থ্যকর্মীও নেই। অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে জখমদের ট্রাকে করে, নয়তো মোটরবাইকে হাসপাতালে এনেছেন পরিজনেরা। হাসপাতালের সামনের রাস্তায় ত্রিপল পেতে, তাতে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে আহতদের। সেখানেই প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে। বেশ কিছু জায়গায় মানুষ এটুকু সাহায্যও পাচ্ছেন না। কারণ বহু এলাকা রাস্তায় ধস নেমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
মুচালিস নামে এক বাসিন্দা জানান, ঘটনার সময়ে তিনি অফিসে ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘তীব্র কম্পন। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ধরেই নিয়েছিলাম, আবারও কাঁপবে মাটি।’’ মুচালিসের আশঙ্কা ভুল নয়। ভূমিকম্পের পরের দু’ঘণ্টায় ২৫টি আফটারশক রেকর্ড করেছে প্রশাসন।
৫৫ বছর বয়সি ওমান জানান, ভূমিকম্পের সময়ে তিনি রান্নাঘরে ছিলেন। এ সময়ে বাড়ি দুলতে শুরু করে। তিনি বলেন, ‘‘কিছু বুঝে ওঠার আগেই হুড়মুড় করে সব ভেঙে পড়ল মাথার ওপর। চাপা পড়েছিলাম আমি। কিছু করার উপায় ছিল না।’’ ওমানের হাত, পা চাপা পড়েছিল ভগ্নস্তূপের নীচে, শরীরে কিছু অংশ বেরিয়েছিল। ভাগ্যক্রমে ভূমিকম্পের সময়ে তাঁর স্ত্রী, ছেলে বাড়ির ভিতর ছিলেন না। ছেলেই তাঁকে বাড়ি ফিরে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন। ওমানের একটা পা ভেঙেছে। প্রৌঢ় বলেন, ‘‘এখন কোথায় যাব জানি না। মাথার উপর ছাদ নেই। তবে প্রাণে বেঁচে গিয়েছি, এটাই অনেক।’’ ১৯ বছরের অগাস আজহারি আগে সে ভাবে ভূমিকম্প দেখেননি। জানিয়েছেন, বাড়িতেই ছিলেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সব ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। তাঁদেরও বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।
প্রশান্ত মহাসাগরে বিস্তৃত আগ্নেয়গিরির বলয় ‘রিং অব ফায়ার’-এর মধ্যে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়া। ভূকম্পনের দিক থেকে সব চেয়ে সক্রিয় পৃথিবীর এই অংশ। ২০০৪ সালে ৯.১ তীব্রতার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে। তার জেরে আসে সুনামি। ১৪টি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সুনামিতে। মৃত্যু হয়েছে ২ লক্ষ ২৬ হাজারের বেশি মানুষের। যার অর্ধেকের বেশি ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দা।
সংবাদ সংস্থা