—প্রতীকী ছবি।
সবজান্তা গুগলকে যদি জিজ্ঞাসা করেন, সে এক লহমায় জানিয়ে দেবে, ভারতবর্ষের পূর্বপ্রান্তের শহর কলকাতা থেকে পূর্ব নিউ জ়িল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরটির দূরত্ব পাক্কা
১১ হাজার ২৬৭ কিলোমিটার। কলকাতায় এখন শরৎ, আর দক্ষিণ গোলার্ধের এই দেশে শীত গিয়ে বসন্ত এসে গিয়েছে।
রৌদ্রজ্জ্বল বসন্তের তেমনই এক সকালে প্রশান্ত মহাসাগরের নৃত্যরত নীল তরঙ্গের শোভায় অভিভূত আমি, কফির পেয়ালায় সবেমাত্র চুমুক দিয়েছি, ‘হোয়াটসঅ্যাপে’ পাবলোর বার্তা ইংরেজিতে, ‘‘আর ইউ ফ্রি, স্মল টক”। পাবলো ওরফে অমিত্রজিত আমাদের দুর্গাপুজার একজন সংগঠক, আমি বয়োজ্যেষ্ঠা সকলের ‘আন্টি’। ফোন করে জানি, পুজোর ব্যাপারে আমায় কিছু ভূমিকা নিতে হবে। আমি বলি, এ বছর নতুন মূর্তি আনার সিদ্ধান্ত কার্যকরী না হওয়ায় আমি কিছু লিখতে অনিচ্ছুক। কথাগুলি উচ্চারণের পরে নিজেরই কানে বাজল, নিজেকে কবিগুরুর ‘পূজার সাজ’ কবিতার মধু বলে মনে হয়। তখনই নেতিবাচক চিন্তা থেকে নিজেকে নিষ্কাষিত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।
এ বার পুজোয় খুশি হওয়ার তালিকা একাধিক। প্রথমত, এই বছর এখানকার পৌরসভার একটি হল পাওয়া গিয়েছে, যা সর্বত ভাবে এই পুজোর উপযুক্ত, সুতরাং মায়ের সাজগোজের পরিকল্পনার পরিধি আগের তুলনায় অনেক। হলের এক প্রান্তে একটি রান্নাঘরের ব্যবস্থাও আছে বইকি। তদুপরি একটি স্টেজ। ক্রাইস্টচার্চ নানা সম্প্রদায়ের সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। তাই সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার কাজে সবাই উদ্গ্রীব হয়ে রয়েছেন। রসনা পরিতৃপ্তি অনেক উৎসবেই উল্লেখযোগ্য, বিশেষ করে যে উৎসব বাঙালির মন-প্রাণ অধিকার করে আছে। এ বছরের মেনু ‘গণতান্ত্রিক’ নিয়ম মেনে, সকল সদস্যের ভোটের পরে তৈরি হয়েছে। শহরের ভারতীয় হালুইকরেরা লোভনীয় মিষ্টি তৈরি করে থাকেন। পুজোর সঙ্গে আরও মনে আসে, বাংলা ও বাঙালির বহু আকাঙ্ক্ষিত বাসনা বাস্তবে রূপান্তরিত হয়, ২০২২-এর শেষে, যখন ইউনেস্কো দুর্গোৎসবকে আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্বীকৃতি দেয়।
১১ হাজার কিলোমিটার দূরে সেই সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের অনুসরণে ক্রাইস্টচার্চের বাঙালিরা মায়ের আবাহন-আয়োজনে ব্যস্ত না হয়ে থাকতে পারেন কি!