প্রতীকী চিত্র।
সারা পৃথিবীর ভয়ানক অসুখ চলছে। তবু মহালয়া থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর তোড়জোড়, বাইরে না-হোক, মনে মনে। করোনার আবহে এই বছর সবই উলটপুরাণ। আলিঙ্গন নয়, পরস্পরের মধ্যে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখাই হল ‘নিউ নর্মাল’। যেখানে মিলনের উপরেই নিষেধাজ্ঞা, সেখানে উৎসব হয় কী করে? তাই এ বছর দুর্গাপুজো আছে, কিন্তু দুর্গোৎসব নেই।সিঙ্গাপুরের হিন্দু বাঙালিদের প্রধান উৎসব দুর্গাপুজো। সারা বছর এই পাঁচ দিনের অপেক্ষায় আমরা পথ চেয়ে বসে থাকি। তবু পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রয়োজনে সেই উৎসব এ বার হচ্ছে না। পৃথিবী সেরে উঠুক, করোনাভাইরাস দূর হোক, সামনের বছর আবার আসবেন মা। তত ক্ষণ পুজো হোক ঘরে-ঘরে, মনে-মনে, নিষ্ঠায়, ভক্তিতে, আরাধনায়।
এ বছর বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অব সিঙ্গাপুরের পুজো শুধু ঘটপুজো। পোটোং-পাসিরের শ্রীশিবদুর্গা মন্দিরে কোভিডের নিয়ম মেনে দুর্গাপুজো হবে, আর সেখানেই অ্যাসোসিয়েশনের নামে ঘট থাকবে। এখানকার রামকৃষ্ণ মিশনেও এ বছর পুজো হচ্ছে না। সব মিলিয়ে একটা নতুন অভিজ্ঞতা হতে চলেছে এ বার, বাইরে পুজো নেই, তাই যেন মা আসছেন অন্দরে। এ বছর অনেকেই নিজের মতো করে বাড়িতে দুর্গাপুজো পালন করার কথা চিন্তা করছেন।
পঞ্জিকার নির্ঘণ্ট অনুযায়ী বাড়িতেই ফুল-বেলপাতা সহযোগে মন্ত্রোচ্চারণ করে অঞ্জলি দেবেন। অথবা সিঙ্গাপুরের বাইরের কোনও দুর্গাপুজোর যদি লাইভ টেলিকাস্ট হয়, তার সঙ্গে অঞ্জলি দেওয়ার কথাও ভাবছেন অনেকে।
আরও পড়ুন: সেনাকে যুদ্ধ প্রস্তুতির নির্দেশ দিলেন চিনফিং
আরও পড়ুন: ফের থমথমে প্যারিস, কড়াকড়ি লন্ডনেও
প্যান্ডেলে পুজো না-হলেও অ্যাসোসিয়েশন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করছে, তবে সবই অনলাইনে। সিঙ্গাপুরে স্কুল, অফিস, শপিং-মল, দোকানবাজার অনেকাংশে খুলে গেলেও জনসাধারণের একত্রিত হওয়া এখনও পাঁচ জনেই সীমাবদ্ধ। তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো দুর্গাপুজো উপলক্ষে পুজোর পাঁচ দিন অনেকেই পাঁচ জনের ছোট ছোট দলে লাঞ্চ বা ডিনারে যাচ্ছেন, অথবা নিছক আড্ডার মারার জন্যই দেখা করছেন কয়েক জন মিলে। পুজো হচ্ছে না, ‘সোশ্যাল-ডিস্ট্যান্সিং’ আইনের অত্যন্ত কড়াকড়ি। তার মধ্যেও কিন্তু লিটল-ইন্ডিয়া সেজে উঠেছে আলোয়, ঝলমল করছে চারপাশ, দোকানে দোকানে শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর বিশেষ ছাড়। অতিমারির সঙ্কটের মাঝে এই রঙবেরঙের আলোর রোশনাই যেন আশার আলো, কোভিড-১৯ পৃথিবী থেকে দূর হতে আর দেরি নেই। এ বছর হল না, সামনের বছর নিশ্চয়ই হবে দুর্গোৎসব, বাঙালির মিলনের উৎসব।