Durga Puja 2021

Durga Puja 2021: প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে অঞ্জলি তো দিতে পারব

এ ভাবেই চলছিল আমাদের প্রবাসের শারদোৎসব। কিন্তু গত বছর এল কোভিড-১৯। কোটি কোটি সংক্রমণ, লক্ষ লক্ষ মৃত্যু। তবু পুজো হয়েছিল।

Advertisement

পার্বতী বসু

বস্টন শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৫৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

পুজো এসে গেল। মা দুর্গা সপরিবার এসেছেন দিন পাঁচেকের ছুটি কাটাতে। পৃথিবীর যে প্রান্তেই বাঙালি থাকুন না কেন, পুজো হয় না এমন স্থান খুঁজে পাওয়া বিরল। তার ব্যতিক্রম আমেরিকার বস্টন শহরতলিও নয়।

Advertisement

বস্টন চত্বরের ছ’-সাতটা বাঙালি ক্লাব রীতিমতো একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে। কে কোন স্কুলের অডিটোরিয়াম জিম বা ক্যাফেটেরিয়া ভাড়া করবে, তাই নিয়ে সবাই মেতে ওঠে। স্থানীয় কলাকুশলীদের নিয়ে নাটকের মহড়া শুরু হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু দিন আগেই, চলছে নাচের কোরিয়োগ্রাফির প্রস্তুতিও। বাচ্চাদের নিয়ে নানা ধরনের অনুষ্ঠানও থাকেই, ওরা পরবর্তী প্রজন্ম বলে কথা। পুজোর অন্যতম আকর্ষণ কলকাতা আর মুম্বই থেকে অতিথি শিল্পীর অনুষ্ঠান। একটা ক্লাব যদি অমুক শিল্পীকে আনে, তো অন্য ক্লাব বায়না দেয় তমুক শিল্পীকে। এতে লাভ হয় আমাদের মতো মানুষদের। এক মণ্ডপ থেকে আর এক মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন প্রিয়শিল্পীর লাইভ শো উপভোগ করা যায়।

এ ভাবেই চলছিল আমাদের প্রবাসের শারদোৎসব। কিন্তু গত বছর এল কোভিড-১৯। কোটি কোটি সংক্রমণ, লক্ষ লক্ষ মৃত্যু। তবু পুজো হয়েছিল। মা এসেছিলেন ‘ভার্চুয়ালি’! কিন্তু জ়ুম ভিডিয়ো কনফারেন্সে কী আর আড্ডা হয়। সুন্দরী বঙ্গললনারা ট্রেন্ডি শাড়ির সঙ্গে কোমরে বেল্ট না ক্রপটপ পরবেন তাই নিয়ে জোরদার আলোচনা, বা প্রিয় শিল্পীর সঙ্গে সেল্ফি বা তাঁদের গাওয়া ‘ডান্স নাম্বারের’ তালে তালে পা মেলানো। ক্যাফেটেরিয়াতে লম্বা লাইন দিয়ে খিচুড়ি বা পাঁঠার মাংস খাওয়া— সব আনন্দেই কোভিড থাবা বসাল !

Advertisement

এ বছর আমরা আশাবাদী, সবাই করোনার টিকা পেয়ে টিকে যখন গিয়েছে সশরীর এ বার পুজো হবেই। কিন্তু অতিমারির ছায়া তো এখনও রয়েছে। ১২ বছরের কম বয়সি শিশুদের এখনও তো টিকা দেওয়াও হয়নি। তাই উনিশের পুজো থেকে একুশের এই পুজো অনেকটাই আলাদা। এই বছর এখানকার প্রায় প্রতিটি পুজোই হচ্ছে, কিন্তু স্বল্প পরিসরে। প্রতি বছর এখানে হাইস্কুল ভাড়া নেওয়া হয় তিন দিনের জন্য। কিন্তু এ বার কোভিড-বিধির গেরোয় কোনও স্কুল ভাড়া পাওয়া যায়নি।। তাই এখানকার যে তিনটি প্রধান অ্যাসোসিয়েশন আছে, সেগুলো মন্দির বা চার্চে পুজো করছে। একটি ক্লাব প্রতিদিন একশো জন করে অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানোর অনুমতি পেয়েছে। অন্যান্য বছরে অতিথি সমাগম হয় অন্তত পাঁচশো জনের। অনেক সময়ে আটশোও ছাড়িয়ে যায় সংখ্যা। আর একটি ক্লাব এক জনের বাড়িতে পুজো করছে। সেখানেও লোকসংখ্যা আরও সীমিত, বাড়ির পুজোর মতোই। এখানকার সবচেয়ে পুরোনো যে ক্লাব, সেই ‘প্রবাসী’ এখানকার একটি মন্দিরের একাংশ ভাড়া করে পুজো করছে। ভিসা সংক্রান্ত কড়া নিয়মকানুনের জন্য কলকাতা বা বলিউডের কোনও শিল্পীকে আনাও সম্ভব হয়নি। তবে ভোগ, অঞ্জলি, ঢাকের বাদ্যি, ধুনুচি নাচ, সিঁদুরখেলা — কিছুই বাদ যাবে না। আর যাঁরা উপস্থিত থাকতে পারবেন না, তাঁদের জন্য থাকবে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ব্যবস্থা।

সীমিত পরিসরে হলেও আমরা সবাই খুশি। না-ই বা হল বড় মাপের উদ্‌যাপন। তাও তো আমরা প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে অন্তত মায়ের অঞ্জলি দিতে পারব। কোভিড সাত লক্ষ আমেরিকাবাসীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। তাই এখন সবাই নিরাপদে থাকাটাই সব থেকে বড় কথা। মা দুর্গা পৃথিবীকে সুস্থ রাখুন, সে-টুকুই আমাদের প্রার্থনা। পুরো দমে আনন্দ করাটুকু না হয় তোলা রইল সামনের বছরের জন্যই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement