বিক্ষোভ দমনে মোতায়েন পুলিশ বাহিনী। বৃহস্পতিবার আলমাটির রাস্তায়। ছবি—রয়টার্স।
জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলন গণবিক্ষোভের চেহারা নিয়েছে রাশিয়ার পড়শি দেশ কাজ়াখস্তানে। গত কাল রাতে দেশের বৃহত্তম শহর আলমাটিতে উন্মত্ত বিক্ষোভকারীরা একটি থানা দখল করতে গেলে তাঁদের থামাতে গুলি চালায় পুলিশ। যাতে মৃত্যু হয়েছে ডজনখানেক বিক্ষোভকারীর। বিক্ষোভকারীদের পাল্টা আক্রমণে নিহত হয়েছেন ১২ জন পুলিশকর্মীও। আহত পুলিশকর্মীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে সাড়ে তিনশো। সরকার-বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া হতাহতদের আসল সংখ্যা নিয়ে অবশ্য নীরব পুলিশ।
গোলমালের সূত্রপাত গত রবিবার থেকে। দেশের পশ্চিমের ঝানাওজ়েন শহরে প্রথম শুরু হয়েছিল এলপিজির চড়া দাম নিয়ে প্রতিবাদ-আন্দোলন। ধীরে ধীরে তা আলমাটি আর রাজধানী নুর-সুলতানের মতো শহরেও ছড়িয়ে পড়ে। গত মঙ্গলবার রাত থেকে আলমাটির পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠায় সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করেন দেশের প্রেসিডেন্ট কাসিম জ়োমার্ট তোকায়েভ। কার্ফু জারি করা হয় নুর-সুলতানেও।
সরকারের বিরুদ্ধে দেশের মানুষের সুর চড়তে থাকায় পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে আসরে নামেন প্রেসিডেন্ট তোকায়েভ। গত কালই প্রধানমন্ত্রী আসকার মামিনের নেতৃত্বাধীন ক্যাবিনেটকে বরখাস্ত করেন তিনি। সেই সঙ্গে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভ কড়া হাতে দমনের বার্তাও দেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তাতে আদৌ কাজ হয়নি । গত কাল রাতে কার্যত জরুরি অবস্থা অমান্য করে আলমাটির পথে নামেন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, দখল করে নেওয়া হয় মেয়রের অফিসও। আরও বেশ কিছু সরকারি ভবন নিজেদের দখলে নিয়ে সেখানে আগুন জ্বালিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক এলাকায় চলছিল বিক্ষোভ দমনে নামা পুলিশকর্মীদের উপরে হামলাও। প্রবল ঠান্ডাতেও তাই বাধ্য হয়ে গত কয়েক দিন রাস্তায় রাস্তায় জল কামান চালাতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। ছোড়া হয় গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসও। কাল রাতে বিক্ষোভকারীরা আলমাটির একটি থানা দখল করতে গেলে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয় বলে জানিয়েছেন আলমাটির পুলিশ বিভাগের প্রধান সালতানাত আজ়িরবেক।
দেশে শান্তি রক্ষায় চুক্তিবদ্ধ দেশগুলিকে আজই আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট তোকায়েভ। তিনি জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নেমেছে ‘কালেক্টিভ সিকিয়োরিটি ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন’ ভুক্ত রাশিয়া, বেলারুশ, তাজিকিস্তান, কিরগিজ়স্তান এবং আর্মেনিয়া। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, শুধু জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিই এই গণবিক্ষোভের আসল কারণ নয়। বহু বছর ধরেই সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মনে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হচ্ছিল। এলপিজির মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিক্ষোভ সেই আগুনেই ঘি ঢালার কাজ করেছে।