আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
ভোটার হিসাবে নথিভুক্ত করতে অবশ্যই নাগরিকত্বের প্রমাণ বাধ্যতামূলক! নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বড়সড় পরিবর্তনের পথে হাঁটতে চলেছে আমেরিকা। মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশনামায় সই করেছেন। শুধু নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়, নয়া নির্দেশনামা অনুযায়ী, নির্বাচনের দিনের মধ্যে সমস্ত ব্যালট গ্রহণ করা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাম্পের মতে, নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্যই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে।
ট্রাম্পের নতুন আদেশনামা অনুযায়ী, আমেরিকায় নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র ছাড়া কোনও ভোটারই ভোট দেওয়ার জন্য নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন না। পাশাপাশি, নির্বাচনের দিনের মধ্যেই সকলকে ভোট দিতে হবে বলেও উল্লেখ রয়েছে ওই আদেশনামায়। মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতে, অনেক স্টেট আছে, যারা এই আইন অনুসরণ করে না। নির্বাচনের পরেও ব্যালট গ্রহণ করা হয়। যা একেবারেই ঠিক নয়।
শুধু আমেরিকার বাসিন্দা হলেই ভোটদান করতে পারবেন। অন্য দেশের নাগরিকেরা যাতে ভোটদান বা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না পারেন, তা নিশ্চিত করা হবে। যে সব আইন আছে তা আরও কঠোর ভাবে পালন করার কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি আরও নির্দেশ দিয়েছেন, ভোটদান ব্যবস্থায় কাগজের ব্যালটই বাধ্যতামূলক! কোনও রকম জালিয়াতি বা ভোটে কারচুপি বরদাস্ত করা হবে না বলেই স্পষ্ট জানিয়েছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প দীর্ঘ দিন ধরেই নির্বাচনে অনিয়ম এবং কারচুপির অভিযোগ তুলছেন। এই নিয়ে বার বার তাঁকে উদ্বেগপ্রকাশ করতেও দেখা গিয়েছে। ডাকযোগে ভোটদান প্রক্রিয়ায় তাঁর বিশেষ আপত্তি ছিল। ট্রাম্পের মতে, নির্বাচনের দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও অনেক রাজ্য থেকেই ডাকযোগে ভোটদান করা হয়। তাতে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। নতুন নির্দেশনামা কার্যকর হলে সেই সুবিধা বন্ধ হবে। যদি স্টেটগুলি এই নির্দেশ না মানে তবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অনুযায়ী তাদের আর্থিক সাহায্য বন্ধ করা হবে।
আদেশনামায় সই করলেও ট্রাম্পের এই নতুন নির্বাচনী নীতি আদৌ কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অনেকের মতে, এই নির্বাহী আদেশ আইনি পথে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। নির্বাচনী বিধি নির্ধারণের ক্ষমতা মূলত মার্কিন কংগ্রেস এবং স্টেটগুলির হাতেই থাকে। সেখানে প্রেসিডেন্টের কোনও ভূমিকা নেই। ইতিমধ্যেই ডেমোক্র্যাটেরা ট্রাম্পের নির্দেশকে ‘অবৈধ’ বলে সরব হয়েছেন। আদালতে এই নির্দেশের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনাও চলছে। তাঁদের মতে, এই নির্দেশ লক্ষ লক্ষ যোগ্য ভোটারকে তাঁর ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে। বিশেষ করে যাঁদের বর্তমানে পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট নেই তাঁরা ভোট দিতে পারবেন না। অনেকেই এটিকে সংখ্যালঘু এবং নিম্ন আয়ের ভোটারদের ভোটদানের অধিকারে বাধা হিসাবে দেখছেন। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের একটি তথ্যসূত্র অনুযায়ী, আনুমানিক প্রায় ৯ শতাংশ যোগ্য মার্কিন নাগরিকের কাছে নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র সহজলভ্য নয়। বর্তমানে সেই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেই মত অনেকের।