ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর এক বছরও বাকি নেই। এ দিকে মাথার উপর খাঁড়া ঝুলছে ইমপিচমেন্টের। বাবার হয়ে তাই এ বার ‘ট্রিগারে’ চাপ দিলেন খোদ জুনিয়র ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে ৩০০ পাতার আস্ত একটা বই-ই লিখে ফেললেন তিনি— ‘ট্রিগার্ড: হাউ দ্য লেফট থ্রাইভস অন হেট অ্যান্ড ওয়ান্টস টু সাইলেন্স আস’। আর তার উৎসর্গপত্রে লিখলেন— ‘হতভাগ্যদের জন্য।’ ট্রাম্প-পুত্রের নিশানায় যে হিলারি ক্লিন্টন, সেটা স্পষ্ট। কারণ, ২০১৬-য় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্প সমর্থকদের যে এই তকমাই দিয়েছিলেন ডেমোক্র্যাট নেত্রী!
লেখক বইটির মুখবন্ধে লিখেছেন, ‘‘অভিজাত বামপন্থীরা কোনও দিন এই বই আপনাকে পড়তে দেবে না।’’ কাল প্রকাশ হওয়ার পরে ২৪ ঘণ্টা পেরোনোর আগেই বইটি কিন্তু আমাজনের সর্বাধিক বিক্রীতের তালিকার তিনে পৌঁছে গিয়েছে। আর হবে না-ই বা কেন! প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে নিজে তাঁর সাড়ে ছ’কোটি টুইট-ফলোয়ারকে একটা করে কপি কেনার কথা বলে রেখেছিলেন আগেভাগেই।
বাবার মতো ছেলেও এই বইয়ে বিরোধীদের পাশাপাশি একহাত নিয়েছেন দেশের একটা বড় অংশের সংবাদমাধ্যমকেও। যদিও লেখককে ক্যামেরার সামনে আনতে মার্কিন সংবাদমাধ্যমেরই একটা বড় অংশে আজ হুড়োহুড়ি লেগে যায়। ক্যামেরার সামনে এলেনও জুনিয়র। নিজেই স্বীকার করলেন যে, বিরোধী আর কিছু সংবাদমাধ্যমের বাড়াবাড়িতে মাঝেমাঝেই তিনি মেজাজ হারান। গরমাগরম টুইট করে ফেলেন। তখন বাবাই ফোন করে বলেন শান্ত হতে।
কিন্তু বাবার টুইট-দৌড়ের তুলনায় জুনিয়র ট্রাম্প তো নেহাতই শিশু— মাত্র ৪০ লক্ষ ফলোয়ার তাঁর! টিভির উপস্থাপক এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করতেই ট্রাম্প-পু্ত্র হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘ওঁর টুইট তো হটকেক! উনি আমাদের ‘টুইটার-ইন-চিফ, ১৪০ অক্ষরের টুইটে শেক্সপিয়ার।’’ মজার ছলেই ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের এগ্জিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঙ্গিতে জানালেন, তিনি ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্ট দৌড়েও নামতে পারেন। তবে আপাতত তিনি বাবার হয়ে প্রচারেই ঝাঁপাতে চাইছেন।
আগামী সপ্তাহ থেকেই শুরু হচ্ছে ইমপিচমেন্ট শুনানি। ইমপিচমেন্ট-কাঁটা থাকলেও, রয়ে-সয়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন রিপাবলিকানরা। টিভি ক্যামেরার সামনেই জুনিয়র ট্রাম্প বলে দিলেন, ‘‘যাঁদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস করা যায়, বাবার আশপাশে এমন লোকের সংখ্যা সত্যিই খুব কম।’’
এ দিকে ইমপিচ-কাণ্ডে তাঁরই এক ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তার সাক্ষ্যে চাপ বেড়েছে প্রেসিডেন্টের। ট্রাম্পের দাবি, ইউক্রেনের একটি তেল ও গ্যাস কোম্পানির বোর্ড-সদস্য হিসেবে ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ইউক্রেনের সমর্থন জোগাড় করে দিয়েছিলেন ডেমোক্র্যাট নেতা তথা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন ও তাঁর ছেলে। ভোটের কথা মাথায় রেখেই বাইডেনদের বিরুদ্ধে ফের তদন্ত শুরুর জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ফোন করেন ট্রাম্প— ডেমোক্র্যাটদের এই অভিযোগেই শুরু হয়েছে ইমপিচ তদন্ত। সেই মামলাতেই সাক্ষী দিতে গিয়েই ট্রাম্পকে চাপে ফেললেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে মার্কিন রাষ্ট্রদূত গর্ডন স্যান্ডল্যান্ড। সূত্রের খবর, তিনি স্বীকার করেছেন যে, কিয়েভ বাইডেনদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু না-করলে আমেরিকা তাদের কোনও রকম সামরিক সাহায্য দেবে না— ইউক্রেনের এক কর্মকর্তাকে তিনি নিজে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
বিরোধীদের অভিযোগ, ট্রাম্প তাঁর ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি গিলানিকে দিয়েই ইউক্রেনকে প্রথম চাপ দেওয়া শুরু করেন। এ বার তাতে নাম উঠে এল গর্ডনেরও। যদিও তদন্ত
না-হলে সাহায্য বন্ধের এই হুঁশিয়ারি বেআইনি কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্পের নিয়োগ করা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘‘আমি তো আইনজীবী নই, তাই ঠিক বলতে পারব না।’’
হাউসের ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডাম স্কিফ জানিয়েছেন, গর্ডন এবং ট্রাম্পের প্রাক্তন ইউক্রেন বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কার্ট ভলকার হাউসে যা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তা জনসমক্ষে আনা হবে। আজ তার কিছুটা অংশ প্রকাশ পেতেই টুইটে ‘উচ্ছ্বসিত’ ট্রাম্প লিখলেন, ‘‘অনেক ধন্যবাদ, ভলকার। বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু নিয়ে ইউক্রেনকে যে ‘শর্ত দেওয়ার’ অভিযোগ উঠেছে, আপনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন— আপনি সে ব্যাপারে ইউক্রেনের সঙ্গে কোনও কথাই বলেননি। তার চেয়ে বড় কথা, আপনি বলেছেন ‘শর্ত দেওয়া’-র ব্যাপারেই আপনি কিছু জানেন না। যত্ত সব ভিত্তিহীন অভিযোগ। উইচ-হান্ট!’’