ফাইল চিত্র।
গুজরাত বা অন্ধ্রপ্রদেশে তৈরি জিনিসপত্র বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে না পৌঁছে, বাংলাদেশেই লগ্নি করুন ভারতীয় শিল্পপতিরা। কারখানা গড়ে সেখানে পণ্য তৈরি করুন। তার পরে সেই পণ্য বাংলাদেশ থেকে কয়েকঘণ্টার দূরত্বে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে পৌঁছে দেওয়া হোক। দু’দেশের মধ্যে আর্থিক বোঝাপড়া আরও মজবুত করতে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে এমনটাই প্রস্তাব দিচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার।
নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনা, দুই সরকারই দ্রুত ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘সামগ্রিক অর্থনৈতিক বোঝাপড়া চুক্তি’ চূড়ান্ত করে ফেলতে চাইছে। এই চুক্তি দু’দেশের মধ্যে কার্যত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ভূমিকা নেবে। গত বছর প্রধানমন্ত্রী মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময়ই এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা হয়েছিল। অর্থনৈতিক বোঝাপড়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে যৌথ সমীক্ষাও হয়ে গিয়েছে। দুই দেশের কূটনীতিকরা মনে করছেন, সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময়ই দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে দর কষাকষির পর্ব শুরু হবে।
ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে উত্তর-পূর্বে পণ্য নিয়ে যাওয়ার জন্য শেখ হাসিনা সরকার ভারতকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর ও খুলনার মংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এই ব্যবস্থায় জাহাজে করে ভারতীয় পণ্য মংলা বা চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে। তার পরে তা ট্রাকে তুলে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে সড়কপথে ত্রিপুরার আখাউড়া বা মেঘালয় সীমান্তের তামাবিলে নিয়ে যাওয়া হবে। আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে পণ্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের অভিযোগ, বাংলাদেশের দিক থেকে বিভিন্ন রকমের ফি, এসকর্ট চার্জ বাড়ানোর দাবি তোলায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, নীতিগত ভাবে ভারতকে দুই বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছোটখাটো সমস্যাও কেটে যাবে। আগামী বছর থেকেই পাকাপাকি ভাবে চট্টগ্রাম, মংলাকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয় পণ্য উত্তর-পূর্বে পৌঁছে যাবে। পদ্মা সেতু খুলে যাওয়ায় মংলা থেকে তামাবিল যেতে সময়ও অনেক কম লাগবে। তবে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, ‘‘ভারতীয় শিল্প সংস্থাগুলির উচিত বাংলাদেশে পণ্য তৈরি করে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে পৌঁছনো। তাতে দু’দিকেরই লাভ।’’
যে সব দেশে সবথেকে বেশি ভারতীয় পণ্য রফতানি হয়, সেই তালিকায় বাংলাদেশ এখন চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। এত দিন দু’দেশের মধ্যে সাফটা (সাউথ এশিয়া ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট)-এর আওতায় বাণিজ্য হয়ে এসেছে। অ্যালকোহল, তামাক ছাড়া বাংলাদেশি পণ্য নিঃশুল্ক ছাড় পায়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের অভিযোগ, শুল্ক ছাড়া ভারতের দিক থেকে বিভিন্ন রকম বাধা রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের রফতানি বাড়ছে না। ২০২৬-এ বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাবে। ফলে বাংলাদেশ এখন আমেরিকা-ইউরোপে রফতানিতে যে শুল্ক ছাড় পায়, তা আর পাবে না। তাই বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সেরে ফেলতে চাইছে।
বাংলাদেশের অন্যতম চিন্তার কারণ হল, সে দেশের পাটজাত পণ্যের উপরে ভারত ‘অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি’। ভারতীয় পাট শিল্পমহলের মতে, বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণে পাটে নগদ ভর্তুকি দেয়। ফলে বাংলাদেশের চটকলগুলির সস্তার পণ্য ভারতে এলে এ দেশের পাটশিল্পের নাভিশ্বাস উঠে যাবে। বাংলাদেশ অবশ্য তা মানতে রাজি নয়। নয়াদিল্লি মনে করছে, আর্থিক বোঝাপড়ার চুক্তি নিয়ে দর কষাকষি শুরু হলে বাংলাদেশের দিক থেকে এই ‘অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি’ তোলার দাবি উঠবে।