মস্কোর কনসার্ট হল হামলায় নিহতদের শ্রদ্ধা জানালেন রাশিয়ানরা। ছবি: রয়টার্স।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শনিবারই জানিয়ে দিয়েছিলেন, মস্কোয় হামলাকারী চার সন্দেহভাজনই ধরা পড়েছেন। রাশিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, ইউক্রেন সীমান্তের দিকে পালানোর চেষ্টা করছিলেন অভিযুক্তেরা। তখনই তাঁদের ধরে ফেলা হয়। ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৩৩ জনের। দায় স্বীকার করেছে আইএসের খোরাসান শাখা। রাশিয়ার এক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে চার বন্দুকবাজের পরিচয়ও। রবিবার রাষ্ট্রীয় শোকপালনের ডাক দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। সাড়া দিয়ে গোটা দেশ শোকপালন করেছে।
ওই রুশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, চার আততায়ী তাজিকিস্তানের নাগরিক। মধ্য এশিয়ার এই দেশ আগে সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের অংশ ছিল। আফগানিস্তান সীমান্ত লাগোয়া এই দেশে মুসলিমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাজিকিস্তান থেকে বহু উদ্বাস্তু এসে রাশিয়ায় বসবাস করে। তাঁদের ধরপাকড়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশে বহু জাতির বাস। তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক, বিভেদের বিষাক্ত বীজ কোনও শক্তি রোপণ করতে পারবে না।’’ এই হামলার কথা প্রকাশ্যে আসতেই তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এমোমালি রহমোন তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদীদের কোনও জাতি, দেশ, ধর্ম হয় না।’’
রাশিয়া যদিও এই হামলার নেপথ্যে ইউক্রেনের হাত দেখেছে। হামলার পর পুতিনের ভাষণের ভিডিয়ো প্রকাশিত হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, মস্কোর ক্রোকাসো হলে হামলার পর লুকিয়ে ইউক্রেন সীমান্তের দিকে পালানোর চেষ্টা করছিল চার আততায়ী। সীমান্ত পেরিয়ে ইউক্রেনে যেতে তাঁদের জন্য সব রকম ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছিল। রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী এফএসবি দাবি করেছে, অভিযুক্তদের সঙ্গে ইউক্রেনের যোগ ছিল। তাঁদের মস্কোয় পাঠানো হয়েছিল। তবে পুতিন বা এফএসবি এই দাবির স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ দেয়নি প্রকাশ্যে। এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে ইউক্রেন। প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, পুতিন এ রকমই করেন। অন্যের উপর দোষ চাপান। ইউক্রেন সেনার গোয়ান্দা বিভাগের মুখপাত্র আন্দ্রি ইয়োসোভ জানিয়েছেন, এই হামলার নেপথ্যে ইউক্রেন নেই। রাশিয়ার হামলাকারীদের থেকে নিজের সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে ব্যস্ত ইউক্রেন। নিজের ঙূখণ্ডকে স্বাধীন করার জন্য লড়ছে।
আমেরিকা শনিবারই দাবি করেছে, এই হামলার নেপথ্যে রয়েছে আইএসের খোরাসান শাখা। আইএসের ওই শাখাও হামলার দায় স্বীকার করেছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, চলতি মাসের শুরুতে এই নিয়ে তারা মস্কোকে সতর্কও করেছিল। যদিও পুতিন সরকার এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে আমেরিকা স্পষ্ট জানিয়েছে, ইউক্রেনের সঙ্গে হামলাকারীদের কোনও যোগ নেই। শনিবারই আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র আদ্রিয়েন ওয়াটসন তা দাবি করেছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মস্কোর ক্রকাস সিটি হলে চলছিল রাশিয়ার রক ব্যান্ড ‘পিকনিক’-এর অনুষ্ঠান। ওই প্রেক্ষাগৃহে হাজার দর্শক এঁটে যেতে পারেন। ফৌজিদের পোশাক পরে কনসার্ট হলে ঢুকেছিলেন জঙ্গিরা। তার পর এলোপাথারি গুলি ছুড়তে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, গ্রেনেড এবং বোমাও ছোড়া হয়। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, কনসার্ট হল ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। সেখান থেকে কালো ধোঁয়া গলগল করে বার হচ্ছে। আগুন নেভাতে তিনটি হেলিকপ্টার থেকে জল ছোড়া হয়। অনেকেই বাঁচতে চেয়ারের পিছনে লুকিয়ে পড়েন। কেউ কেউ দৌড়ে বেসমেন্টে বা ছাদেও উঠে পড়েন। এই ঘটনায় চার হামলাকারীর পাশাপাশি আটক আরও সাত জন সন্দেহভাজন।