প্রতীকী চিত্র।
আশঙ্কার মেঘ জমছে আমেরিকার মাথার উপর। তারা ভেবেছিল, গরম আসতে-আসতে অনেকটাই কেটে যাবে করোনা-আতঙ্ক। টিকাকরণের উপরে আস্থা রেখেই এই আশা জেগেছিল। কিন্তু ডেল্টা স্ট্রেনের প্রকোপে সেই আশা ফিকে হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। বাড়তি ভয়— দেশের একাংশ প্রতিষেধক পেলেও, আর এক ভাগে টিকাকরণের হার একেবারে কম।
এত দিন আমেরিকায় করোনা সংক্রমণ ঘটাচ্ছিল মূলত আলফা স্ট্রেন বা ব্রিটেন স্ট্রেন (বি.১.১.৭)। ক্রমেই সেই জায়গা দখল করছে অতিসংক্রামক ডেল্টা স্ট্রেন। ৫০টি প্রদেশের প্রতিটিতেই মিলেছে ডেল্টা। সমীক্ষা রিপোর্টে জানা গিয়েছে, দেশে নতুন সংক্রমণের ৪০ শতাংশই হচ্ছে ডেল্টা স্ট্রেনে। এ দিকে, দেশবাসীর একাংশের টিকাকরণ নিয়ে অনীহা কাটছে না। কিছু দিন আগেই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘‘দেশটা দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে। এক দল টিকা নিয়েছে, অন্য দল নেয়নি।’’ দ্রুত টিকাকরণের উপরে জোর দিচ্ছে তারা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য,
টিকা নেওয়া থাকলেও হয়তো সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না। কিন্তু বাড়াবাড়ি হওয়া আটকানো যাবে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি বিশেষ কোভিড রেসপন্স দল তৈরি করেছেন। যে সব অঞ্চলে টিকাকরণের হার কম, সেখানে বাসিন্দাদের বোঝাতে দলটিকে পাঠানো হচ্ছে।
ব্রাউন ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্য পরিষেবা বিষয়ের অধ্যাপক, মেগান রানে বলেন, ‘‘ডেল্টা ভ্যারিয়্যান্ট নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করছে। এর অন্যতম কারণ, অনেকেরই এখনও টিকা নেওয়া হয়নি। আমরা কি সত্যিই নিরাপদ? আমাদের বাচ্চারা নিরাপদ? রেস্তরাঁয় গেলে কি বিপদ হবে? লোকজন তো মনে করছেন, সব স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে!’’
ডেল্টা স্ট্রেনের বাড়বাড়ন্তের মধ্যে লকডাউন সম্পূর্ণ তুলে দেওয়ার কথা ভাবছে ব্রিটেন। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বক্তব্য, ‘‘করোনাভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে শেখা শুরু করুন।’’ আগামী ১৯ জুলাই ‘স্বাধীনতা দিবস’ পালন করার কথা ভাবছে ব্রিটিশ সরকার। আগে ঠিক ছিল ২১ জুন লকডাউন তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু ডেল্টার প্রকোপে তা বাতিল হয়। ডেল্টা সংক্রমণ অবশ্য কমেনি, বরং বেড়েছে। এখন নতুন সংক্রমণ সব ডেল্টাতেই হচ্ছে। কিন্তু এই পরিস্থিতির মধ্যেও লকডাউন তোলার কথা ভাবছে সরকার। অর্থনীতি রক্ষায় ও দেশবাসীর দাবি মেনে এই সিদ্ধান্ত। কিছু নিষেধাজ্ঞা অবশ্য থাকবে। যেমন, নাইটক্লাব খোলা যাবে না। বড় জমায়েত নিষিদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী দফতর থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, এ জিনিস কমার নয়। বরং লকডাউন উঠলে আরও বাড়বে। কিন্তু এটাও সত্যি, টিকা নেওয়া থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না। ব্রিটেনের ৬৪ শতাংশ বাসিন্দার টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
গত কালই ব্রিটেনের আবাসন মন্ত্রী জানিয়েছেন, মাস্ক পরাও আর আবশ্যিক থাকবে না। প্রয়োজন অনুযায়ী মাস্ক পরার সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাসিন্দাদের। আজ প্রধানমন্ত্রীর মুখেও শোনা গিয়েছে একই ইঙ্গিত— ‘‘ভাইরাসকে নিয়ে বাঁচা শিখতে হবে।’’