বছরভর একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। ছবি:শাটারস্টক।
দাবানল থেকে ভূমিকম্প, বৃষ্টিপাত থেকে বন্যা, ভয়াবহ ধস আর একের পর এক ভয়ঙ্কর হারিকেনের তাণ্ডবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নানা দেশ লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে ২০১৭-য়। বিশ্বজুড়ে বছরভর একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা এর আগে ঘটেনি এই শতাব্দীতে। দাবানল গ্রাস করেছে প্রায় গোটা উত্তর ক্যালিফোর্নিয়াকে, ফ্লোরিডা, টেক্সাস আর ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের একাংশ কার্যত ধ্বংস হয়ে গিয়েছে একের পর এক হারিকেনের তাণ্ডবে। আর মেক্সিকো কেঁপে উঠেছে ভয়াবহ ভূমিকম্পে। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সুবিস্তীর্ণ এলাকা। ভয়াবহ বন্যা আর ধসের মাশুল গুনতে হয়েছে সিয়েরা লিওনের রাজধানীকে। ডুবে গিয়েছে বাংলাদেশ আর নেপালের সুবিশাল এলাকা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, খুব দ্রুত হারে উষ্ণায়ন বেড়ে চলার জন্যই বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে এত বেশি আলোড়িত হয়েছে। ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে এ বছর প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বৃষ্টিপাতের সার্বিক পরিমাণ বেড়েছে অন্তত ২ থেকে ৩ শতাংশ। আর অতি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে কম করে ৬ থেকে ৭ শতাংশ।
এ বছরের বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনাগুলির ওপর চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক:
হারিকেন পুয়ের্তো রিকোয়:
ডিসেম্বরে হারিকেন ‘মারিয়া’ লন্ডভন্ড করে দিয়ে দিয়েছে পুয়ের্তো রিকোকে। ক্যাটেগরি ৫-এর এই হারিকেনে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার। প্রাণ হারান অন্তত ৬৪ জন। ওই হারিকেনের দৌরাত্ম্যে কার্যত ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুৎ পরিষেবা। প্রায় নিষ্প্রদীপ পুয়ের্তো রিকোয় ৬ মাসের আগে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দাবানল ক্যালিফোর্নিয়ায়:
অক্টোবরে ভয়ঙ্কর দাবানলের গ্রাসে পড়েছিল উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া। যাতে মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ৪৩ জনের। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সোনোমা, মেন্ডোসিনো, ইউবা আর নাপা কাউন্টিগুলি। এর আগে এত বড় দাবানল আর হয়নি ক্যালিফোর্নিয়ায়।
জিম্বোবোয়েতে বৃষ্টিপাত:
অক্টোবরে প্রবল বৃষ্টিপাতে জিম্বাবোয়েতে মৃত্যু হয় প্রায় ২৫০ জনের।
মেক্সিকোর ভূমিকম্প:
এ বছরে তিন-তিনটি ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প কেঁপে উঠেছে মেক্সিকো। যে ভূকম্পগুলি হয়েছে মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে। গত ১০০ বছরে এত তীব্র ভূকম্পন হয়নি মেক্সিকোয়। দক্ষিণ মেক্সিকোয় গুয়াতেমালা সীমান্তের কাছে সেপ্টেম্বরের প্রথম ভূকম্পনের মাত্রা রিখটার স্কেলে ছিল ৮.১। যাতে মৃত্যু হয় কম করে ৫০ জনের। তার দেড় সপ্তাহের মাথায় ফের ৭.১ মাত্রার ভূকম্পে কেঁপে ওঠে মেক্সিকো। যাতে ৩০০-রও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। ৪ দিন পর আবার ৬.১ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে গোটা মেক্সিকো।
ফ্লোরিডা ও উত্তর ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে হারিকেন ‘ইরমা’:
সেপ্টেম্বরে ভয়াবহ হারিকেন ‘ইরমা’র দাপটে দারুণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফ্লোরিডা ও উত্তর ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ। নিরাপত্তার কারণে শুধু দক্ষিণ ফ্লোরিডা থেকেই কম করে ৬০ লক্ষ মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের বারবুডা, অ্যান্টিগা আর কিউবাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় দারুণ ভাবে।
টেক্সাসের হারিকেন ‘হার্ভে’:
অগস্টের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিক পর্যন্ত হারিকেন ‘হার্ভে’র দাপটে মৃত্যু হয় অন্তত ৭৭ জনের। ভেসে গিয়েছিল গোটা হিউস্টন।
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতে বন্যা:
অগস্টে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতে বন্যায় অন্তত ১ হাজার ২০০ জনের মৃত্যু হয়। জলবন্দি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন ৪ কোটিরও বেশি মানুষ।
কঙ্গোয় ধস:
অগস্টে গণ প্রজাতন্ত্রী কঙ্গোয় ধসে মৃত্যু হয় ১৭৪ জনের।
সিয়েরা লিওনে তুমুল বৃষ্টিপাত, বন্যা:
অগস্টে সিয়েরা লিওনে তুমুল বৃষ্টিপাত আর বন্যায় প্রাণ হারান ৬০০-রও বেশি মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হন ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ।
চিনে বন্যা:
জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ে চিনে প্রবল বন্যায় প্রাণ হারান প্রায় ১৫০ জন।
শ্রীলঙ্কায় বৃষ্টিপাত:
তুমুল বৃষ্টিপাতে মে মাসের শেষে শ্রীলঙ্কায় মৃত্যু হয় ২১৩ জনের। প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন।
কলম্বিয়ায় ধস:
এপ্রিলে কলম্বিয়ায় ধসে প্রাণ হারান ৩০০-রও বেশি মানুষ।
পেরুতে বন্যা:
বছরের প্রথম দিকে প্রবল বন্যায় পেরুতে প্রাণ হারান অন্তত ১৫০ জন। জলবন্দি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ।
আফগানিস্তানে তুষার ধস:
ফেব্রুয়ারিতে তুষার ধসে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে মৃত্যু হয় ১৫৬ জনের।