এখানেই হদিশ মিলেছে ডুমৌলিন দম্পতির। ছবি: সংগ্রহ।
মার্সেলিন এবং ফ্রান্সিন ডুমৌলিন। গিয়েছিলেন ভ্যালিয়াস চারণভূমিতে। প্রায় সাড়ে আট হাজার ফুট উঁচুর ওই চারণভূমি থেকে ওই দম্পতি আর ফিরে আসেননি। পরিবারের লোকজন তন্ন তন্ন করে খোঁজ করেছে। কিন্তু, সন্ধান পাওয়া যায়নি। সেটা ছিল ১৯৪২-এর অগস্ট। শেষ পর্যন্ত প্রায় ৭৫ বছর পর তাঁদের মৃতদেহ মিলল বরফে জমাট বাঁধা অবস্থায়। আল্পস পর্বতের স্যানফ্লিওরন হিমবাহে!
আরও পড়ুন- ইহুদি হটানোয় ফ্রান্সের সমালোচনা মাকরঁ-র মুখে
স্থানীয় পুলিশের দাবি, গত সপ্তাহে স্যানফ্লিওরন হিমবাহে এক স্কি-কোম্পানির কর্মী মৃতদেহ দু’টি শনাক্ত করেন। বরফের খাদে পড়ে গিয়েই ওই যুগলের মৃত্যু হয় বলে স্থানীয় পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। তাদের দাবি, প্রায় দু’হাজার মিটারেরও বেশি উঁচুতে একটি হিমবাহের বরফ গলতে শুরু করে। আর এই কারণেই মৃতদেহ দু’টির হদিশ পাওয়া গিয়েছে। স্কি-কোম্পানির কর্মীটি দূর থেকে একটি মৃতদেহ দেখতে পান। কাছে গিয়ে দেখেন, একটি পুরুষ এবং এক জন মহিলার মৃতদেহ বরফে চাপা। পুরুষটির পরনে বিশ্বযুদ্ধকালীন পোশাক। আর পাশে পড়ে রয়েছে, একটি ব্যাগ, বোতল, জুতো এবং আরও কিছু জিনিসপত্র। মৃতদেহের কাছ থেকে পাওয়া একটি বই, ব্যাগ এবং ঘড়ি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য লাউজানে-তে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ভালাইস পুলিশ।
মৃতদেহের সঙ্গে থাকা জুতো এবং বোতল। ছবি: সংগ্রহ।
ডুমৌলিন দম্পতির সাত ছেলেমেয়ে। তাঁরা কেউই এক মুহূর্তের জন্য আশা ছেড়ে দেননি। বরং সর্ব ক্ষণ সেই মুহূর্তের অপেক্ষায় দিন গুনেছেন, কখন তাঁদের মা-বাবা বাড়ি ফিরবেন। মার্সেলিন এবং ফ্রান্সিনের ছোট মেয়ে উর্দির বয়স এখন ৭৯ বছর। উর্দি বলছেন, ‘‘মা শিক্ষিকা ছিলেন। আর বাবা জুতো তৈরি করতেন। মাঝে মধ্যেই তাঁরা চারণভূমির দিকে হাঁটতে যেতেন। কেন না মায়ের যৌবনের বেশির ভাগ সময়টাই কেটেছে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়।’’ মা-বাবা নিখোঁজের মাস দুয়েকের মধ্যেই উর্দি এবং তাঁর ভাইবোনদের দেখাভাল করতে শুরু করে অন্য একটি পরিবার। আর এত দিন পরে মা-বাবার মৃতদেহের সন্ধান মেলায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন উর্দি। বলছেন, ‘‘এখন আমরা তাঁদের একটি যথাযথ অন্ত্যোষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারব।’’
গত কয়েক বছর ধরে আল্পস্ পর্বতমালায় বেশ কিছু পর্বতারোহীদের মৃতদেহের হদিশ মিলেছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বরফ গলতে শুরু করেছে। আর সেই কারণেই অনেক মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।