বেশ কিছু দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে, দাউদ কিডনির কঠিন অসুখে আক্রান্ত।
দাউদ ইব্রাহিমের ঠিকানা যে পাকিস্তানেই, অবশেষে তা কবুল করল ইসলামাবাদ।
শনিবার পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, করাচির অভিজাত এলাকা ক্লিফটনে সৌদি মসজিদের কাছে ‘হোয়াইট হাউস’ নামে একটি বাড়িকেই দাউদের ঠিকানা হিসেবে চিহ্নিত করেছে পাক প্রশাসন। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, করাচির ডিফেন্স হাউসিং অথরিটির ৩০ নম্বর রাস্তায় ৩৭ নম্বর বাড়ি এবং নুরবাদে পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাসাদোপম বাড়ির মালিকও দাউদ।
১৯৯৩ সালে মুম্বই বিস্ফোরণের মূল চক্রী, ভারতে একাধিক জঙ্গি হামলার পিছনে মাথা হিসেবে অভিযুক্ত দাউদ যে পড়শি মুলুকের বাণিজ্যনগরী করাচির বাসিন্দা, বহু বছর ধরে তা দাবি করে আসছে দিল্লি। দাউদের যে ঠিকানার কথা পাকিস্তান কবুল করেছে, সেই ঠিকানা অনেক দিন আগেই ইসলামাবাদের হাতে তুলে দিয়েছিল তারা। এ-ও বলা হয় যে, পাক সেনাবাহিনী এবং প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের নাকের ডগাতেই বাস করে দাউদ। দীর্ঘদিন তাকে নিরাপত্তা দিয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। পাকিস্তান অবশ্য এত দিন দাউদের করাচি-বাসের কথা জোরের সঙ্গেই অস্বীকার করেছে। তার এ দিনের স্বীকারোক্তির পরে দাউদকে হাতে পেতে ভারত ঝাঁপাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভারতকে চাপে রাখতে পাক-চিন বৈঠকে কাশ্মীর প্রসঙ্গ
আরও পড়ুন: দু’বছরের কম সময়ে করোনামুক্ত হবে বিশ্ব, আশাপ্রকাশ হু প্রধানের
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের মতে, মূলত আন্তর্জাতিক চাপ, বিশেষ করে বিশ্ব জুড়ে আর্থিক অপরাধ রুখতে নীতি তৈরি ও কার্যকর করে যে সংস্থা, সেই ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এর চাপের কারণেই দাউদের বিষয়টি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানকে ২০১৮ সালে ধূসর দেশের তালিকায় রাখে এফএটিএফ। ইসলামাবাদকে বলা হয়, জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে নিষ্ক্রিয় করার প্রশ্নে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা ২০২০ সালের গোড়ায় জানাতে হবে। সেই ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না-হলে পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। করোনা আবহে সেই সময়সীমা কিছু দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সেই সময়সীমাও শেষের মুখে। এফএটিএফ-এর কালো তালিকাভুক্ত হলে বহু আন্তর্জাতিক অনুদান পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে পাকিস্তানের।
নাম
• দাউদ ইব্রাহিম কাসকর
জন্ম
• ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৫৫। ভারতে। বাবা শেখ ইব্রাহিম আলি কাসকর মুম্বই পুলিশের প্রাক্তন হেড কনস্টেবল ছিলেন।
আদি বাড়ি
• ডোংরি, মুম্বইবর্তমান ঠিকানা
• হোয়াইট হাউস। আরব সাগর ঘেষা করাচির অভিজাত মহল্লা ক্লিফটনে। সৌদি মসজিদের কাছে। ১৯৯৪ থেকেই পাকিস্তানে।
অন্যান্য বাড়ি
• করাচির ডিফেন্স হাউসিং অথরিটির ৩০ নম্বর রাস্তায় ৩৭ নম্বর বাড়ি।
• করাচিরই নুরবাদে পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাসাদ।
সন্তান
• চারটি। মেয়ে মাহরুখ পাক ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াঁদাদের পুত্রবধূ।
অভিযোগনামা
• ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’। রাষ্ট্রপুঞ্জের অপরাধীর তালিকায় নাম। সেখানে পরিচিতি ‘কিউডিআই-১৩৫’। মুম্বইয়ের ‘ডি-কোম্পানির’ পাণ্ডা। সুপারি নিয়ে খুন, তোলাবাজি, মাদক পাচারের বহু মামলা।
• মাথার দাম আড়াই কোটি ডলার।
• ১৯৯৩ সালের মুম্বই বিস্ফোরণের মূল চক্রী। হত আড়াইশোরও বেশি।
শাগরেদরা
• ছোটা রাজন (পরে শত্রু, এখন জেলে), ছোটা শাকিল (অধরা), টাইগার মেমন (মুম্বই বিস্ফোরণের পলাতক চক্রী), আবু সালেম (জেলে)
• সাবির, আনিস, হাসিনা পার্কারের মতো ভাইবোনেরাও জড়িয়েছে অন্ধকার জগতে
পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে
• ভারতীয় হিসেবে মুম্বই থেকে আট বার। সৌদি আরবের জেড্ডা থেকে এক বার।
• সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও দুবাই থেকে এক বার।
• পাকিস্তানি হিসেবে রাওয়ালপিন্ডি থেকে তিন বার, করাচি থেকে এক বার (জুলাই, ১৯৯৬)
সেই সম্ভাবনা এড়াতেই ব্যক্তি ও সংগঠন মিলিয়ে মোট ৮৮টি নাম এফএটিএফ-কে জানিয়ে পাকিস্তান দাবি করেছে, এদের আর্থিক লেনদেনে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গত ১৮ অগস্ট পাক সরকার একটি নির্দেশিকায় বলেছে, দাউদ ছাড়াও জামাত-উদ-দাওয়া প্রধান হাফিজ সইদ, জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহার এবং আল-কায়দার উপরে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এদের গতিবিধির উপরে কড়া নজর রাখা হয়েছে। কড়াকড়ি বেড়েছে পাক তালিবানের উপরেও।
প্রশ্ন হল, এই তালিকায় দাউদকে কেন জুড়ল পাকিস্তান?
বেশ কিছু দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে, দাউদ কিডনির কঠিন অসুখে আক্রান্ত। তার দায় নাকি এ বার ঝেড়ে ফেলতে চায় আইএসআই। অনেকের প্রশ্ন, এটা কি তারই প্রথম ধাপ? আবার অন্য পক্ষের বক্তব্য, এর আগেও বহু বার মনে হয়েছে, যেন হাতের নাগালে এসে গিয়েছে দাউদ। কিন্তু ডন এখনও অধরাই।
ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে পড়লেই, কুমিরছানা দেখানোর মতো করে পাক মাটিতে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন ও তার মাথাদের উপরে কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপানোর কথা বলে ইসলামাবাদ। এমনকি কাউকে কাউকে গৃহবন্দিও করা হয়। কিন্তু কিছু দিন পরে পরিস্থিতি ঠান্ডা হতেই স্বমহিমায় ফেরে তারা। তাই এফএটিএফ-এর চাপে কোণঠাসা হয়ে এদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের কথা বলা অন্তত পাকিস্তানের দিক থেকে নতুন নয়।
তবে দাউদ প্রসঙ্গে ইসলামাবাদের স্বীকারোক্তি চিরাচরিত এই নাটকে নয়া মোড় আনে কি না, সেটাই দেখার।