Cyclone Amphan

বাংলাদেশ ঢুকে কিছুটা নিস্তেজ ঘূর্ণিঝড়, মৃত ১৯

আমপানের হাত থেকে রক্ষা পেতে আগেভাগেই সতর্ক থাকায় এবং ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে অনেককে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে প্রাণহানি অনেকটা কমানো গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢাকা ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০৪:৪৯
Share:

ধ্বংসস্তূপ: আমপানে ভেঙে গিয়েছে বাড়ি। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সাতক্ষীরায়। রয়টার্স

প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গে তাণ্ডব চালিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরেই বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে আমপান। বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় বুধবার বিকেল থেকেই শুরু হয়েছিল ঝোড়ো হাওয়া, সঙ্গে পড়ছিল বৃষ্টিও। রাত যত বেড়েছে, তাণ্ডবও বেড়ে চলছিল ততই। সন্ধের পর থেকে যে অঞ্চলে ছোঁয়া লেগেছে আমপানের, সেখানেই সব কিছু গুঁড়িয়ে লন্ডভন্ড করে দিয়ে গিয়েছে। উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকায় রাতভর রাজত্ব করে মধ্যাঞ্চলের রাজশাহী, রংপুরে এসে কিছুটা শক্তি হারায় আমপান। যশোর বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিস জানায়, বুধবার রাত ১০টায় ঝড়ের গতিবেগ ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১০৪ কিলোমিটার, রাত ১২টায় তীব্রতা বেড়ে হয় ১৩৫ কিলোমিটার। রাত পৌনে ২েটায় ঝড়ের গতিবেগ কিছুটা স্তিমিত হয়। বৃহস্পতিবার সকালেও ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে চলে মৃদু বৃষ্টি।

Advertisement

আমপানের হাত থেকে রক্ষা পেতে আগেভাগেই সতর্ক থাকায় এবং ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে অনেককে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে প্রাণহানি অনেকটা কমানো গিয়েছে। কিন্তু সহায়সম্বল হারিয়ে অনেকেই এখন দিশাহারা।

সরকারি হিসেবে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আমপানে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও বেসরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ১৯ জন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলায় দু’জন, পটুয়াখালিতে দু’জন, ফিরোজপুরে তিন জন, বরগুনায় এক জন, সন্দ্বীপে এক জন, যশোরে ছ’জন, সাতক্ষীরায় এক জন, ঝিনাইদহে দু’জন ও রাজশাহীতে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। জানা গিয়েছে, মৃত ১৯ জনের মধ্যে ৬ জনই মারা গিয়েছেন গাছের নীচে চাপা পড়ে।

Advertisement

আরও পড়ুন: আমপান তাণ্ডবে রাজ্যে মৃত ৮০, পুনর্গঠনে হাজার কোটি

দিল্লির মৌসম ভবন সূত্রের খবর, রাতের মধ্যে শক্তি খুইয়ে আমপান নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ফলে তার থেকে আর তেমন বিপদ নেই বলে আবহবিজ্ঞানীরা জানান।

আমপানের ধ্বংসলীলা দেখে তাজ্জব হয়েছেন অনেকেই। আবহবিদদের একাংশের ধারণা, সুন্দরবন এলাকায় স্থলভাগের মাঝে খাঁড়ি, নদী রয়েছে। তার ফলে স্থলে ঢুকেও কিছুটা শক্তি পেয়েছে সে। কলকাতায় ঝড়ের এই ধ্বংসলীলার পিছনে আবহবিদদের অনেকে মনে করছেন, ঘিঞ্জি শহরের মধ্যে ঝোড়ো হাওয়া বারবার পাক খেয়েছে। তাতেই এমন পরিস্থিতি। শহরে যে হারে গাছ ভেঙে পড়েছে, তাতে গাছের রক্ষণাবেক্ষণ, গোড়ায় মাটি এমনকি কী ধরনের গাছ লাগানো উচিত তা নিয়েও বিশেষজ্ঞেরা বিস্তারিত পর্যালোচনার দাবি তুলেছেন। কলকাতায় লালবাজারের কন্ট্রোলরুমা বুধবার সারা রাত ছিলেন বিশেষ কমিশনার জাভেদ শামিম-সহ অভিজ্ঞ পুলিশকর্তারা। তাঁদের অনেকের মতেই, এমন ঝড়ের তাণ্ডব আগে তাঁরা দেখেননি। তবে পরিবেশবিদেরা এ-ও বলছেন, এ বারও অনেক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়েছে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য।

আরও পড়ুন: আয়লার চেয়ে তেজি আমপান, ‘হাতিবাঁধে’ রক্ষা বহু গ্রামের

ঘূর্ণিঝড়ে সাতক্ষীরা, যশোর, নওগা, রাজশাহী, রংপুরে কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছে। রাস্তার দু’পাশের অসংখ্য গাছ উপড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গিয়েছে। ফলে, বুধবার সন্ধে সাতটা থেকে এদিন দুপুর পর্যন্ত সাতক্ষীরা ও যশোর জেলা শহর ও উপজেলার অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আমপানের প্রভাবে রাজশাহি, সাতক্ষীরা, চাপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় আমের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আম চাষিরা জানিয়েছেন, প্রায় ৫০ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে।

বড় বড় গাছ উপড়ে পড়ায় যশোর-বেনাপোল সড়ক ও আশপাশের বিকল্প সকল পথ এ দিন বন্ধ ছিল। যে অবস্থা তাতে সড়ক পরিষ্কার হতেও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে। ঝড়ে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ ঠিক কত, বোঝা এখনও সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনিক কর্তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement