প্রতীকী ছবি।
ইউরোপে ক্রমেই বিভাজনের ছায়া ফেলছে রাশিয়া। দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে মহাদেশ। কারণ, রুশ ভ্যাকসিন।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার টিকায় রক্ত জমাট বাধার মতো বিপদ দেখা যাচ্ছে বলে চ্যাডক্স১-কে এক রকম পরিত্যাগ করেছে ইউরোপ। ও দিকে, ফাইজ়ারের টিকার আকাল। প্রয়োজন মাফিক টিকা মিলছে না বলে দীর্ঘ অভিযোগ জমেছে। অগত্যা বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সেই সন্ধানেই রুশ প্রতিষেধকের দিকে হাত বাড়ানো। ইতিমধ্যেই ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল। কিন্তু ইতিহাস ভুলতে পারছে না
ইউরোপের বহু দেশ।
স্পুটনিক শব্দটা সঙ্গে প্রথম পরিচিতি পায় ১৯৫৭ সালে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম স্যাটেলাইট পাঠায় মহাকাশে। নাম ছিল স্পুটনিক। সেই নামে নিজেদের ভ্যাকসিনের নাম রেখেছে মস্কো। গত বছর প্রতিষেধকটিকে ছাড়পত্র দেওয়ার সময়ে তারা এ-ও দাবি করে, ফের গোটা বিশ্বকে টেক্কা দিয়ে নজির গড়ল রাশিয়া। কিন্তু বিশ্ববাসী তা মানেনি। বরং সন্দেহের চোখে তাকিয়েছিল। কারণ, কোনও আন্তর্জাতিক জার্নালে স্পুটনিক-ভি সংক্রান্ত কোনও গবেষণাপত্র প্রকাশ করেনি রাশিয়া। টিকার সম্পর্কে কোনও তথ্যাদি জনসমক্ষে আনতে রাজি হয়নি। কিন্তু এক বছর পরে সেই সন্দেহ অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছে।
স্পুটনিক ভি-কে এখনও ছাড়পত্র দেয়নি ইইউ-এর ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি। কিন্তু বহু দেশ থেকেই প্রতিষেধকটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। ইউরোপের বাইরে আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, ইজ়রায়েল, ফিলিপিন্স ইতিমধ্যেই আবেদন জানিয়েছে। রাশিয়া জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারতের সঙ্গে প্রতিষেধক উৎপাদন করার জন্য চুক্তি করেছে। কিন্তু ইউরোপে স্পুটনিক নিয়ে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। কারণটা রাজনৈতিক। লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ডের কাছে রাশিয়া ভয়ের বিষয়। পর্তুগাল ও মাল্টার কাছে বিষয়টা তেমন নয়। ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনা ছাউনি কিংবা রুশ বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি প্রসঙ্গেও চাপানউতোর রয়েছে। কিন্তু ইউরোপে টিকাকরণের গতি এতটাই কম, যে হতাশা গ্রাস করেছে। মতভেদ থাকা সত্ত্বেও রুশ টিকা নিতেও মরিয়া হয়ে উঠেছে ইইউ। হাঙ্গেরি নিজেদের মতো করে ইতিমধ্যেই
স্পুটনিক ভি কিনে ফেলেছে। ওই টিকার কিছুটা অংশ তারা ফ্রান্স,
জার্মানি ও অন্য কয়েকটি দেশকেও দিয়েছে। প্রবীণ ফরাসি কূটনীতিক পিয়ের ভিমঁ বলেন, ‘‘পুরোটাই যুক্তিসঙ্গত। এমনিই আমরা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি। এ অবস্থায় নিজেদের ভালটাতো দেখতেই হবে।’’ রুশ সমর্থক দেশগুলির বক্তব্য, ‘‘রাশিয়ার তৈরি বলে প্রতিষেধকটিকে বাঁকা চোখে দেখা হচ্ছিল। অতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল না। কিন্তু স্পুটনিক স্যাটেলাইটের মতো টিকার ক্ষেত্রেও রাশিয়া সত্যি টেক্কা দিয়েছে বাকি বিশ্বকে।’’