কাইজার পার্মানেন্ট ওয়াশিংটন হেল্থ রিসার্চ ইনস্টিটিউটে এক ব্যক্তির উপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হচ্ছে করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য প্রতিষেধক। ছবি: এপি
‘অতিমারি’ (মহামারির চেয়েও ভয়ঙ্কর) ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। প্রতি দিন লাফিয়ে বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা, ছড়িয়ে পড়ছে নতুন নতুন দেশে। নোভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ে ভয়াবহ উদ্বেগের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর দিল আমেরিকা। পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করা শুরু হল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা। যদিও এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষার স্তরেই রয়েছে। এই টিকার গবেষণায় অবদান রয়েছে ভারতেরও। ভারত ও নরওয়ের যৌথভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা এই প্রতিষেধক তৈরি করেছে বলে দাবি করা হয়েছে। যদিও পরীক্ষায় সফল হবে কিনা, তা জানতে এখনও অন্তত ছ’সপ্তাহ সময় লাগবে।
বিশ্বজুড়ে মহামারির আকার নিয়েছে করোনার সংক্রমণ। প্রতিরোধের উপায় খুঁজছে সব দেশ। এখনও বেশ কয়েকটি ধাপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাকি থাকলেও কিছুটা হলেও আশার আলো দেখিয়েছে এই টিকার খবর। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন, ‘‘আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, পরীক্ষামূলক ভাবে প্রতিষেধক টিকা দেওয়ার প্রথম ধাপ শুরু হয়েছে। ইতিহাসে এত দ্রুত কোনও প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগের নজির নেই। এমনকি, কাছাকাছিও নেই। অ্যান্টি ভাইরাল থেরাপি ও অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের চেষ্টাও আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।’’
মার্কিন প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘এমআরএনএ-১২৭৩’ নামের এই টিকার প্রয়োগ শুরু করেছেন আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেল্থ (এনআইএইচ)-এর অধীন দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (এনআইএআইডি)-র বিজ্ঞানীরা এবং তার সহযোগী বায়োটেকনোলজি সংস্থা মডার্না আইএনসি। কাইজার পারমানেন্ট ওয়াশিংটন হেল্থ রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এ এই পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। স্বেচ্ছায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের উপর শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ। এই পুরো প্রয়োগ প্রক্রিয়ার খরচ বহন করছে এনআইএআইডি। শারীরিক ভাবে সুস্থ ও স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণকারী ১৮ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে বিভিন্ন বয়সের মোট ৪৫ জনের উপর এই প্রতিষেধক পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করা হবে। প্রায় ছ’সপ্তাহ ধরে চলবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ। তার পরেই এই পরীক্ষা সফল কিনা, তা জানা যাবে।
আরও পড়ুন: ফের দেশে করোনায় মৃত্যু, দিল্লি, কর্নাটকের পর এ বার মহারাষ্ট্রে
আরও পড়ুন: করোনা: ভারতের হাতে ৩০ দিন, সতর্কবার্তা বিশেষজ্ঞদের
এনআইএআইডি-র ডিরেক্টর অ্যান্টনি এস ফাউচি বলেছেন, ‘‘সার্স-কোভ-২ প্রতিরোধে নিরাপদ ও কার্যকরী প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার চিকিৎসা ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি চাহিদা হয়ে উঠেছে। সেই লক্ষ্যে প্রথম পর্বের এই পরীক্ষা শুরু হয়েছে নজিরবিহীন দ্রততার সঙ্গে।’’ এনআইএচ-এর তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সার্স-কোভ-২ সংক্রমণ থেকেই কোভিড-১৯ ভাইরাসের উৎপত্তি। এই কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে মৃদু থেকে তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তার সঙ্গে উপসর্গ হিসেবে থাকে জ্বর ও সর্দিকাশি।
টিকা তৈরির জন্য গবেষণা হয়েছে ‘দ্য কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস (সিইপিআই)’— এই সংস্থার অধীনে। ২০১৫ সালে এই সংগঠন তৈরির পরিকল্পনা শুরু হয় এবং তা বাস্তবে রূপ পায় ২০১৭-তে। ভারত ও নরওয়ের সরকার, বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, দ্য ওয়েলকাম ট্রাস্ট এবং ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের যৌথ উদ্যোগে গঠিত হয় এই সংস্থা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই সংস্থায় অর্থ অনুদান দেয়।