Coronavirus

শববাহকদের মিছিল থামিয়ে দিল পুলিশ

করোনা-সংক্রমণ সব থেকে বেশি হয়েছে দেশের উত্তরে। এখন উত্তর-পূর্ব ইটালির লম্বার্ডি এলাকায় হাসপাতালে তিল ধারণের জায়গা নেই।

Advertisement

ঋদ্ধি ঘোষ

বোলোনিয়া (ইটালি) শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২০ ০২:১৮
Share:

ইটালির একটি হাসপাতালে কোরনা আক্রান্তদের চিকিত্সা। ছবি: রয়টার্স।

কোভিড-১৯ বা ‘করোনাভাইরাস ডিজ়িজ় ২০১৯’-কে ‘অতিমারী’ আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কোনও অসুখ যখন এক সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাকে ‘প্যানডেমিক’ বা অতিমারী বলা হয়। একটি দেশে খুব দ্রুত যখন কোনও রোগ ছড়ায়, স্বাভাবিক ভাবেই মারাত্মক চাপ পড়ে সেখানকার স্বাস্থ্য পরিষেবার উপরে। ঠিক যেমন হয়েছে ইটালিতে।

Advertisement

করোনা-সংক্রমণ সব থেকে বেশি হয়েছে দেশের উত্তরে। এখন উত্তর-পূর্ব ইটালির লম্বার্ডি এলাকায় হাসপাতালে তিল ধারণের জায়গা নেই। করিডরে আইসিইউ তৈরি করা হয়েছে। একসঙ্গে বেশি মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ালে তার মধ্যে অন্তত কয়েক জনের অবস্থা গুরুতর হবে এবং তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। অবস্থা আরও সঙ্গীন হলে আইসিইউ এবং ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন বাড়বে। কিন্তু সব হাসপাতালেই তো আইসিইউ আর ভেন্টিলেটরের সংখ্যা সীমিত।

করোনা-সংক্রমণ সব থেকে বেশি দেশের যে এলাকায় হয়েছে, সেটি কিন্তু ইউরোপের অন্যতম বিত্তশালী অঞ্চল। ফলে এখানকার স্বাস্থ্য পরিষেবাও অত্যন্ত উন্নত মানের।
কিন্তু সংক্রমণ যে হারে এবং যে গতিতে বেড়ে চলেছে, তা সামাল দেওয়া এখানকার হাসপাতালের পক্ষেও কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের তরফ থেকে চিকিৎসকদের বলা হয়েছে, তাঁদের পক্ষে যে হেতু এত বিপুল সংখ্যক আক্রান্তের চিকিৎসা করা সম্ভব নয়, ডাক্তারদের নিজেদেরই ঠিক করতে হবে তাঁরা কাদের চিকিৎসা করবেন, কাদের করবেন না। বয়স ও বাঁচার সম্ভাবনার নিরিখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে চিকিৎসকদের।

Advertisement

মঙ্গলবার থেকে ঘরবন্দি মানুষজন সব থেকে মুশকিলে পড়ছেন পরিবারের কেউ মারা গেলে। সব ধরনের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এমনকি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য জমায়েতেও। কেউ মারা গেলে হাসপাতাল থেকেই দেহ নিয়ে গিয়ে কবর দিয়ে দিচ্ছেন আত্মীয়েরা।
তা-ও খুব ঘনিষ্ঠ দু’-এক জন আত্মীয় ছাড়া কাউকেই কবরস্থানে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রার্থনাসভা বা অন্যান্য পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম বন্ধ। প্রধানমন্ত্রী জুসেপ কোন্তে মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে কোয়ারেন্টাইন ঘোষণা করেন। সে দিনই সিসিলিতে জনা পঞ্চাশেক লোক শব নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনভঙ্গের অভিযোগ-ও আনা হতে পারে।

গত কাল একটি মর্মান্তিক খবর শুনলাম। নেপলস শহরে এক নিজের বাড়িতে মারা গিয়েছিলেন। তখন বাড়িতে তাঁর বাবা-মা ও ভাই ছিলেন। মৃত্যুর পরে লালারস পরীক্ষা করে দেখা যায়, মহিলা নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সৎকার সমিতি তাঁর দেহ কবর দিতে অস্বীকার করে। মহিলার মৃতদেহ নিয়ে অসহায় অবস্থায় বাড়িতেই বসেছিলেন তাঁর পরিবারের লোকজন। পরে সরকারের তরফে দেহ কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও মহিলার বাবা-মা বা ভাইকে সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি। তাঁরা সংক্রমিতের সান্নিধ্যে ছিলেন বলে এখন গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে তাঁদেরও। মৃতার ভাই সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে ভিডিয়ো পোস্ট করে জানিয়েছেন, দিদির শেষকৃত্যে থাকতে না-পারার এই দুঃখ সারা জীবন থাকবে।

(লেখক বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement