ওয়েলসের রাস্তায়। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া
দুপুরে ভাত-মাংস খেয়ে দু’চোখের পাতা এক করব ভাবছি, এমন সময় মনে পড়ল, আজকের ‘স্কোর’ আসার সময় হয়ে গিয়েছে।
না, কোনও খেলার স্কোর নয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা। কোভিড-১৯ যখন সারা বিশ্বের ত্রাস হয়ে উঠেছে, তখন এই বিষয়টাকে খেলার স্কোরের মতো করে দেখাটা অনেকটা ওই রূপক দিয়ে সত্যকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা। যদিও বাস্তবটা এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। প্রতিদিন বিশ্ব জুড়ে হাজার হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সংখ্যাটা প্রতি দু’দিনে এক লক্ষ ছাড়াচ্ছে। মারা যাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। আজ তো ইউনিভার্সিটি হসপিটালের ভারতীয় কার্ডিয়ো সার্জন জিতেন্দ্র রাঠৌরও মারা গেলেন।
কলকাতা থেকে ৮১৬২ কিলোমিটার দূরে ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফে থাকি। পাহাড়, ঝর্না, নদী আর সবুজ ভেলভেটের মতো ঘাস দিয়ে সাজানো এই ওয়েলস ব্রিটেনের একটি অংশ। ২০,৭৩৫ বর্গ কিলোমিটারের ওয়েলসে থাকেন ৩১ লক্ষ মানুষ। মানুষের তিন গুণ ভেড়া। লকডাউনের ফলে রাস্তায় গাড়ি এবং মানুষ কমে যাওয়ায় ডাইনোসর না-ফিরলেও ফিরে এসেছে পাহাড়ি ভেড়ার দল। ওয়েলসের রাস্তা এখন তাদের দখলে।
এখনও পর্যন্ত ওয়েলসে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ৩,৪৯৯, মারা গিয়েছেন প্রায় দু’শো জন। শেষ দু’টো সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি। এখানকার মানুষের যে অনেক পরে টনক নড়েছে তার প্রমাণ, কিছু দিন আগে পর্যন্ত বাচ্চাদের স্কুল খোলা ছিল। ব্রিটিশ সরকার লকডাউন ঘোষণার পরেও লোকের আনাগোনা ছিল বিভিন্ন পাব ও কাফেতে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দিন কয়েক আগেও দেখলাম এক ঝাঁক লোক বিখ্যাত পর্যটনস্থল স্নোডোনিয়ায় ছুটি কাটাতে গিয়েছেন। ইটালির পরে সেই একই ভুল করেছে এই দেশটা।
দোকানে হ্যান্ডস্যানিটাইজ়ার শেষ হয়ে গিয়েছে অনেক দিন। মাস্কও পাওয়া যাচ্ছে না। সুপারমার্কেটে খোলার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় জিনিস শেষ হয়ে যাচ্ছে। সরকারের আশ্বাস সত্ত্বেও সবাই প্রয়োজনের থেকে বেশি জিনিস কিনছে। কাল সকালে আমিও গিয়েছিলাম সুপারমার্কেটের ওই ভিড়ে রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে। সকাল সাতটার সময়ে পৌঁছে দেখলাম, আমি একা নই। রীতিমতো লাইনের শেষের দিকে দাঁড়াতে হল। দরকারি জিনিসগুলো পেলেও মনের ভেতর ভয়টা থাকছেই। ভিড় থেকে আক্রান্ত হব না তো!
পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে জানি না। এখন মনে একটাই ইচ্ছে— দুর্গাপুজোটা যেন কলকাতায় কাটাতে পারি।
(লেখক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী)