ছবি রয়টার্স।
আমি শিলচরের মেয়ে। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেছিলাম। ২০১৩ সাল থেকে ব্রিটেনে রয়েছি। যুক্ত আছি বাকিংহামশায়ারের অ্যামেরশাম হাসপাতালের সঙ্গে।
নাম প্রকাশ করতে পারছি না, কারণ আমি নিজেই করোনা-আক্রান্ত। আসলে ব্রিটেনে কে যে করোনা-আক্রান্ত নয়, সেটাই এখন বলা মুশকিল। রোগীর ঢল নামছে হাসপাতালগুলোয়। ডাক্তার কম, নার্স কম। কারণ সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন৷ নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইসিইউ বেড। এমনকি, ডাক্তারদের পিপিই কিট-ও দুর্লভ। শুধু আইসিইউয়ে যাঁদের ডিউটি, তাঁরাই পিপিই পাচ্ছেন। ফলে আমাকে প্লাস্টিক গাউন, সার্জিক্যাল মাস্ক ও গ্লাভস পরেই রোগী দেখতে হয়েছে।
মার্চের শেষ সপ্তাহে ৫ জন রোগী ছিলেন আমাদের দুই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে। তাঁদের ২ জন পজ়িটিভ। অন্য ৩ জনও করোনা পজ়িটিভ বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল। ৩ এপ্রিল আমরা দুই চিকিৎসকই আক্রান্ত হই করোনায়। প্রথমে শুকনো কাশি। সঙ্গে জ্বর। পরের দিন থেকে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা।
আরও পড়ুন: দ্বিগুণ হবে ক্ষুধার্ত, শঙ্কা রাষ্ট্রপুঞ্জের
আশঙ্কা ছিলই। তাই আগে থেকে মাল্টিভিটামিন নিচ্ছিলাম। সঙ্গে চলছিল ব্যায়াম। কিছু অ্যান্টিবায়োটিকও নিয়েছি। কারণ করোনায় অনেকের নিউমোনিয়া হয়ে যাচ্ছে। বিছানায় শুয়ে আমি ভাবছি দেশের কথা। ভারতেও প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। আতঙ্কে রয়েছি, কখন না অবস্থাটা এখানকার মতো হয়ে যায়। ব্রিটেনে সব করোনা রোগীকে হাসপাতালে রাখা হয় না। ধরা পড়লেই বলা হচ্ছে, ‘দ্রুত বাড়ি চলে যাও। বাড়িতে থাকো।’ যখন অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, তখনই হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে৷
আমি তো তবু ডাক্তার বলে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়েছি। সাধারণ রোগীদের ‘বাড়ি থাকো’র বাইরে কোনও প্রেসক্রিপশনও নেই। ফলে আমরা টিভিতে বা অন্য মাধ্যমে এখানকার রোগীর যে সংখ্যাটা দেখছি, বাস্তবে আক্রান্ত তার থেকে ঢের বেশি।
আরও পড়ুন: রমজানে যত্রতত্র থুতু না ফেলতে আর্জি
এখন তো আর এক সমস্যা। ডাক্তারেরাই একের পর এক অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। হাসপাতাল চালানোই মুশকিল। তাই করোনায় আক্রান্ত ডাক্তারদেরও ডাকাডাকি হচ্ছে। আমাকেও ডাকছে। এখনও আমি সুস্থ হয়ে উঠিনি। আমার থেকেও অন্যরা পজ়িটিভ হতে পারে। তাই অন্তত আরও এক সপ্তাহের আগে রোগী দেখব না।
ভয়ের কথা কি এখানেই শেষ! আমি করোনা-মুক্ত কি না, তা জানতে আমার কিন্তু আর টেস্ট হবে না। আবার পরীক্ষা করানো একেবারে অসম্ভব। কারণ যথেষ্ট টেস্ট কিট নেই৷ কত মানুষের প্রথম বারই পরীক্ষা হচ্ছে না। ডাক্তার বলে আমার তো তবু এক বার হয়েছে!
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)