ছবি এএফপি
উত্তর-পশ্চিমে বেলজিয়াম, দক্ষিণে ফ্রান্স ও পূর্বে জার্মানি-বেষ্টিত পশ্চিম ইউরোপের একটি ছোট্ট দেশ লুক্সেমবুর্গ। আয়তনে লুক্সেমবুর্গ বিশ্বে ১৬৭তম স্থানে কিন্তু আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থা ও বিশ্ব ব্যাঙ্কের নিরিখে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী দেশ এটি। কর্মসূত্রে গত নভেম্বরে এ দেশে আসা। তখনও কোন ধারণা ছিল না যে, কয়েক মাস পরে কী হতে চলেছে। নোভেল করোনাভাইরাসের আক্রমণের আগে এখানকার বাসিন্দাদেরও ধারণা ছিল না যে, শুধু অর্থের দ্বারা সব সমস্যার সমাধান করা যায় না।
প্রতিবেশী দেশে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ শুরু হতেই এখানকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং যথারীতি অন্যান্য দেশের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুত করতে শুরু করেন। যার ফলে দোকান-বাজারে লম্বা লাইন ও জিনিসপত্রের কৃত্রিম সঙ্কট! লকডাউনে প্রথম প্রথম আমাদেরও ভয় ছিল যে, প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে বোধহয় খুব অসুবিধা হবে। কিন্তু আমরা সে ভাবে কোনও অসুবিধা ভোগ করিনি। জিনিসের দাম কিছু ক্ষেত্রে কমেও গিয়েছে, যেমন গাড়ির তেলের দাম লিটার প্রতি ১.২ ইউরো থেকে কমে ০.৮৯ ইউরো হয়ে গিয়েছে।
প্রথম দিকে লকডাউন না-থাকায় কাফে, রেস্তরাঁ, সেলুন বা জিমে কোনও সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছিল না। তার ফলে সংক্রমণ অনেক বেশি হচ্ছিল। কিন্তু ১৬ মার্চ থেকে লকডাউন চালু হতেই ছবিটা পাল্টে যায়।
আরও পড়ুন: লকডাউন শিথিল হতেই জার্মানিতে ফের বাড়ছে সংক্রমণ, বিশ্বে করোনা আক্রান্ত ৪০ লক্ষের বেশি
দেশের ৬.২ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে প্রথম করোনা-আক্রান্তের খবর পাওয়া যায় এ বছর ফেব্রুয়ারিতে। তারপর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং এ পর্যন্ত প্রায় চার হাজার জন আক্রান্ত আর মৃত একশোর একটু বেশি। করোনা-মোকাবিলায় লুক্সেমবুর্গ সরকার প্রশংসনীয় ভাবে কাজ করছে। করোনা-পরীক্ষা প্রথম দিকে প্রতিদিন ৭৫০ জনের করা হচ্ছিল কিন্তু এপ্রিল মাস থেকে এখন দিনে আড়াই হাজার জনের পরীক্ষা হচ্ছে। বলা হয়েছে যে, মে মাসের শেষে কোভিড-পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে দিনে কুড়ি হাজার হবে। প্রশাসনের তরফে সংক্রমণ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য খুব স্বচ্ছ ভাবে জনসাধারণকে জানানো হচ্ছে এবং মাঝেমধ্যেই স্পষ্ট করে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, কী করণীয় বা কী করণীয় নয়। স্থানীয় মিউনিসিপ্যালিটি প্রত্যেক বাসিন্দার জন্য বাড়ি বাড়ি সার্জিক্যাল মাস্ক (জনপ্রতি ৫টা) বিনামূল্যে পাঠিয়ে দিয়েছে। অন্যান্য পদক্ষেপ, যেমন স্কুল ও কলেজ বন্ধ করা, ওয়ার্ক ফ্রম হোম ইত্যাদি চালু করার ফলে করোনা-আক্রান্তের গড় সংখ্যা এপ্রিলে দৈনিক ৫০-এর নীচে চলে গিয়েছে, যেটা মার্চে গড়ে ১০০ ছিল।
পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে দেখে গত মাসের ২০ তারিখ থেকে প্রাথমিক ভাবে বেশ কিছু নিয়ম শিথিল করা হয়েছিল। প্রথমে নির্মাণ-শিল্প, তার পরে ধীরে ধীরে মাধ্যমিক স্তরের স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্রেশ খোলে। আগামিকাল থেকে লকডাউন আরও শিথিল হবে। সাধারণ যাতায়াতের ব্যবস্থা যেমন বাস ইত্যাদি আরও বেশি চলবে। এখানে মার্চ মাস থেকেই বিনামূল্যে বাসে সফর করা যাচ্ছে।
এই করোনা-অতিমারি ভীষণ ভাবে আমাদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু, এর একটা ইতিবাচক দিকও রয়েছে। লকডাউনের কারণে পরিবারের সঙ্গে, বিশেষত বাচ্চাদের সঙ্গে আমরা সময় কাটাতে পারছি। পরিবারের সঙ্গে বাড়তি সময় আমাদের রোজকার শ্রান্তি কাটাতে সাহায্য করছে।
কাল থেকে লকডাউন শিথিল হলেও আমরা সরকারের সমস্ত নির্দেশিকা পালন করব, যাতে এই ভাইরাসকে আমাদের থেকে দূরে রাখা যায়।
(লেখক ই-কমার্স সংস্থায় কর্মরত)
আরও পড়ুন: সিকিমের সীমান্তে ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষে উত্তেজনা, জখম দু’পক্ষেই