প্রতীকী ছবি।
উল্লেখযোগ্য সম্ভাব্য প্রতিষেধকের তালিকায় রাশিয়ার ‘স্পুটনিক ভি’-কে রাখেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। ট্রাম্প পরিচালিত মার্কিন প্রশাসনও সেই টিকা ‘ছুঁইয়েও দেখতে চায় না’ বলে জানিয়েছিল। তা সত্ত্বেও ওই টিকার চাহিদা হু হু করে বাড়ছে বলে দাবি রাশিয়ার। তাদের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘স্পুটনিক ভি’ হাতে পেতে তৎপর বিশ্বের কমপক্ষে ২০টি দেশ। সেই তালিকায় রয়েছে ভারতের নামও। যদিও এ নিয়ে ভারতের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি।
রাশিয়ার দাবি, ভারত ছাড়াও ‘স্পুটনিক-ভি’ হাতে পাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, ব্রাজিল, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো বিভিন্ন দেশ। বিশ্বের অন্যান্য দেশে টিকা তৈরি ও প্রচারের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের দায়িত্ব সামলাচ্ছে রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড। তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ক্ষেত্রে এই দেশগুলির কথা মাথায় রাখা হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। আগামী মাসে টিকার বিপুল উৎপাদনের পরিকল্পনার কথা কথা আগেই জানিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সম্প্রতি রুশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাশকো সেই প্রসঙ্গে জানালেন, ‘‘প্রথমে রাশিয়ার দু’টি জায়গায় ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু হবে।’’
রাশিয়ার এই প্রতিষেধক ‘আবিষ্কার’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন মহল। তা হলে কি প্রাকৃতিক উপায়ে পাওয়া হার্ড ইমিউনিটিই একমাত্র পথ? মঙ্গলবার আবার হু এই প্রসঙ্গে জানিয়েছে, প্রতিষেধক ছাড়া স্বাভাবিক হার্ড ইমিউনিটির ক্ষেত্রে যতটা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা প্রয়োজন, এখনও তার ধারে কাছেও পৌঁছতে পারেনি বিশ্ব। ফলে সংক্রমণে শিকল পরাতে এখনও বেশ দেরি। স্বাভাবিক হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের লক্ষ্যে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশকে সংক্রমিত হতে দেওয়া যায় না বলেও মত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।
ইউরোপ ও আমেরিকার পরে মালয়েশিয়া এবং ফিলিপিন্সের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশে ছড়িয়ে পড়া ‘সুপার স্প্রেডার’-এর তকমা পাওয়া করোনাভাইরাসের নয়া প্রজাতি বা ‘স্ট্রেন’ ‘ডি৬১৪জি’ নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চলছে। তবে প্রাথমিক ভাবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ছোঁয়াচে হলেও এই নয়া প্রজাতির ‘মারণ ক্ষমতা’ তেমন ভয়াবহ নয়। বরং খানিকটা হলেও কমই। মালয়েশিয়ায় ৪৫টি সংক্রমণের ঘটনার এক ক্লাস্টারে এই স্ট্রেনের প্রভাব দেখা গিয়েছে। ভারত-ফেরত এক জনই এই সংক্রমণের উৎস বলে দাবি সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের। যার জেরে ভাঁজ পড়েছে ভারতের কপালেও। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরও এক দেশ ফিলিপিন্সের রাজধানী শহর ম্যানিলাতেও এর সন্ধান মিলেছে।
তবে এই ভাইরাসে পরিবর্তনের জেরে সম্ভাব্য প্রতিষেধক নিয়ে সব গবেষণা একেবারে জলে চলে গেল বলে যে রব উঠেছিল তা প্রায় উড়িয়েই দিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব ইনফেকসাস ডিজ়িজ়েসের কর্তা পল তামবিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘যতই মিউটেশন হোক না কেন, তা সম্ভাব্য প্রতিষেধকের কর্মক্ষমতা হ্রাস করার পক্ষে যথেষ্ট নয় বলেই মনে হয়।’’ যা ভ্যাকসিনের জন্য অপেক্ষায় থাকা বিশ্ববাসীর পক্ষে খানিকটা হলেও স্বস্তির বলে মত অধিকাংশের।
এ দিকে করোনা-ঝড় অব্যাহত আমেরিকায়। বিশ্বে মোট মৃতের ৬৪ শতাংশই এ দেশের। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু ম্যাসাচুসেটস থেকেই নতুন করে ২১৩ জনের সংক্রমণের খবর সামনে এসেছে। করোনার দ্বিতীয় ঝড় আছড়ে পড়েছে ফ্রান্সে। মাসের শুরুর দিকের দৈনিক সংক্রমণ এখন ছ’গুণ বেড়েছে বলে দাবি স্বাস্থ্য কর্তাদের। সেপ্টেম্বর থেকে অফিস খোলার কথা ফ্রান্সের বহু শহরে। তখন মাস্ক পরতেই হবে বলে জানিয়েছে প্যারিস। ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে চার হাজার ‘রেকর্ড’ সংক্রমণের খবর এসেছে ইরাক থেকে।