করোনা-ত্রাস।
সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত ছিল বছর ১৬-র ছেলেটি। মা বেঁচে নেই। তাঁর বাবাই সব রকম দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন। কথা বলা, হাঁটাচলা, নিজে হাতে খাওয়া কোনওটাই সম্ভব ছিল না ওই কিশোরের পক্ষে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে তাঁর বাবাকে গত ২২ জানুয়ারি কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছিল। ছেলে ইয়ান চেংকে দেখার কেউ ছিল না আর। এক ভাই থাকলেও তাঁকেও একই কারণে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছিল। বাবা-ভাইকে বাড়ি থেকে সরিয়ে দেওয়ার এক সপ্তাহ পরে মারা যায় ইয়ান।
সংবাদমাধ্যমে দাবি, ওই এক সপ্তাহের মধ্যে মাত্র দু’বার খেতে দেওয়া হয়েছিল ইয়ানকে। স্থানীয় কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি এবং হুয়াজিয়াহে শহরের মেয়রকে এই ঘটনায় সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে দাবি। ঘটনাটি ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
চিনের মধ্য হুবেই প্রদেশে থাকত ইয়ানরা। করোনাভাইরাসের ‘কেন্দ্র’ বলে মনে করা হচ্ছে এই প্রদেশকে। ২২শে জানুয়ারি আলাদা করে রাখার পাঁচ দিন পরে ইয়ানের বাবার করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ইয়ানের বাবা চিনের সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েইবো-তে সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, খাবার আর জলটুকুও নেই ছেলের কাছে। কিন্তু তাতেও কিছু করা যায়নি।
ভাইরাস-ত্রাস
• চিনে মৃতের সংখ্যা ছুঁল ৪২৫
• আক্রান্তের সংখ্যা (মঙ্গলবার পর্যন্ত) ২০,৪৩৮
• সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মার্কিন সাহায্য নিতে রাজি চিন
• স্থানীয় ভাবে সংক্রমণের খবর সিঙ্গাপুর থেকেও
• সিঙ্গাপুরে এমন চার মহিলার দেহে সংক্রমণের খোঁজ যাঁরা চিনের উহানে যাননি
মঙ্গলবার চিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছুঁয়েছে ৪২৫। আমেরিকা অহেতুক এই রোগ নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, এমন অভিযোগ তুললেও আজ চিন প্রশাসন জানিয়েছে, মার্কিন সাহায্য নিতে তাদের কোনও রকম আপত্তি নেই। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র হুয়া চুনিং আজ বলেছেন, ‘‘আমেরিকা একটি নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ যুক্তিযুক্ত অবস্থান নিক। অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি বন্ধ করুক। আমেরিকা বারবারই সহায়তা করার আগ্রহ দেখিয়েছে। চিন সেটা জানে। আমাদের আশা, দ্রুত আমরা সাহায্য পাব।’’ হোয়াইট হাউসও জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মার্কিন বিশেষজ্ঞদের এই ভাইরাস সংক্রান্ত গবেষণা ও লড়াইয়ের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে চিন।
হুবেইয়ের প্রাদেশিক রাজধানী শহর উহান-সহ বেশ কিছু শহর তালাবন্ধ হয়ে যাওয়া এবং চিনে সফর নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক ভাবে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে চিন। আর্থিক অব্যবস্থার আশঙ্কা আরও বাড়ছে।
এর মধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে স্থানীয় ভাবে সংক্রমণের খবর চিন্তা বাড়িয়েছে স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞদের। এই শহরের চার জন এমন মহিলা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন যাঁরা চিনের উহানে যাননি বলে দাবি। এঁদের মধ্যে দু’জন কাজ করেন সিঙ্গাপুরের কালাং সাবজ়োনে। সেখানে ল্যাভেন্ডার নামে একটি জায়গার ক্যাভান রোডে চিনা স্বাস্থ্য-সামগ্রী বিক্রি হয়। সেই দোকানের কর্মী তাঁরা। চিনা পর্যটক গোষ্ঠীদের সাহায্য করে এই দোকান। তৃতীয় মহিলা এক জনের পরিচারিকার কাজ করেন। চতুর্থ জন টুর-গাইডের কাজ করেন। তিনি চিনা পর্যটকের একটি দলকে ওই দোকানেই নিয়ে গিয়েছিলেন। পর্যটক-দলটি চিনে ফিরে গিয়েছে। তার পরেই এই খবর মিলেছে।
স্থানীয় সংক্রমণ ছাড়াও সিঙ্গাপুরে আরও দু’জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে মঙ্গলবার। ৯২ জনের যে দলটিকে গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর থেকে উহানে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন এই দু’জন। সব মিলিয়ে এখন সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছুঁয়েছে ২৪।
করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে ছড়াচ্ছে বিদেশ-ভীতিও। বিশ্ব জুড়ে এশীয়দের নিয়ে তৈরি হচ্ছে অহেতুক সন্দেহ। সম্প্রতি এমন খবর এসেছে অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্ট থেকে। সেখানে এক রোগী তাঁর চিকিৎসক রিয়া লিয়াংয়ের সঙ্গে করমর্দন করতে আপত্তি জানান। স্তম্ভিত রিয়া বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানাতেই দেখা যায়, এমন ঘটনা আকছার ঘটছে। এশীয় বংশোদ্ভূত অনেক ব্যক্তিই এমন হেনস্থার মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ।