ছবি: সংগৃহীত।
রবিবার নিয়ে গত ২৬ দিন ধরে লাগাতার দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা পার করেছে ১ লক্ষেরও বেশি। শুক্রবার দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যায় নতুন রেকর্ড গড়ে ২ লক্ষের বেশি হয়েছে। সেই সঙ্গে সংক্রমিতদের মধ্যে মৃত্যুহারও উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে। ফলে চরম বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছে আমেরিকার করোনা পরিস্থিতি। এমনটাই আশঙ্কা করছেন সে দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার ভারতীয় সময় দুপুর আড়াইটে নাগাদ আমেরিকার মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৩২ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৪৯। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লক্ষ ৫০ হাজার ১৫১ জন। আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের দাবি, চলতি সপ্তাহে শুক্রবার পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ১ লক্ষ ৬৬ হাজারেরও বেশি নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। যা জুলাইয়ের পর থেকে প্রায় আড়াই গুণ বেশি। এখনও পর্যন্ত সে দেশে মৃত্যু হয়েছে ২ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬৩ জন কোভিড রোগীর। পাশাপাশি, অন্তত ২০টি রাজ্যে থ্যাঙ্কস গিভিং উইকএন্ডের কোভিড-তথ্য প্রকাশ করেনি।
ফলে, উপরের তথ্য হিমশৈলের চূড়া মাত্র। থ্যাঙ্কস গিভিং সপ্তাহান্তের জমায়েতের ফলে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। আসন্ন বড়দিনেরও জমায়েত হতে পারে। স্বাস্থ্যবিধিকে তোয়াক্কা না করার মনোভাবই আমেরিকার করোনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে বলে বিপর্যয়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমনটাই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আমেরিকার বহু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
আরও পড়ুন: মা করোনা আক্রান্ত, সদ্যোজাতের শরীরে পাওয়া গেল অ্যান্টিবডি
আরও পড়ুন: করোনায় নয়, জাপানে বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন আত্মঘাতে! প্রকাশ্যে অবাক করা তথ্য
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলকেন ইনস্টিটিউট স্কুল অব পাবলিক হেল্থ-এর ভিজিটিং প্রফেসর তথা ইমার্জেন্সি মেডিসিন চিকিৎসক লিয়ানা ওয়েন বলেন, “আগামী গ্রীষ্মে বা বসন্তে কোভিড ভ্যাকসিন এই পরিস্থিতির উন্নতিতে বড়সড় তফাত গড়ে দিতে পারে। তবে তা এখনই সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এই মুহূর্তে আমাদের অসতর্ক হলে চলবে না।”
‘কোভিড ট্র্যাকার প্রোজেক্ট’-এর সমীক্ষা জানিয়েছে, শুধুমাত্র শনিবার সন্ধ্যাতেই ৯১ হাজার ৬৩৫ জনকে আমেরিকার বিভিন্ন কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তবে পরিসংখ্যান যতই আশঙ্কাজনক হোক না কেন, করোনা নিয়ে আমজনতা এখনও বেপরোয়া বলে মনে করছেন অনেকে। থ্যাঙ্কস গিভিংয়ের হই হুল্লোড়-জমায়েতের পর ইতিমধ্যেই বড়দিনের ছুটি কাটাতে দেশের বাইরে যাওয়ার হিড়িক শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এতে আমেরিকার করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ আরও কঠিন হতে পারে। তাঁদের মতে, অনেকে অজান্তে সংক্রমণের শিকার হলেও সে অবস্থাতেই জমায়েত করছেন বা ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন। যার ফলে সংক্রমণ আরও ছড়াচ্ছে। এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন লিয়ানা। তিনি বলেন, “কিছু না হলেও আমরা বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছি। শীঘ্রই আমেরিকার কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা দৈনিক ২ হাজার বা ৩ হাজার এমনকি, ৪ হাজারের বেশি হতে পারে।”
লিয়ানের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা মনে করছেন জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যায়ের মেডিসিনের অধ্যাপক জোনাথন রেইনার। তিনি মনে করেন, ছুটি কাটানোর সময় বন্ধুবান্ধব বা পরিজনদের জমায়েত সাধারণ মানুষজন বেশিক্ষণ ধরে মাস্ক পরা অগ্রাহ্য করেন। তার থেকেও সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। রেইনারের মতে, “আমাগী ১০ দিনে দেশে প্রতিদিন ৪ হাজারের কাছাকাছি রোগীর মৃত্যু হতে পারে।”
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না আমেরিকার বহু রাজ্য। ইতিমধ্যে লস এঞ্জেলিস কাউন্টিতে লকডাউনের নির্দেশ জারি করেছে। মাস্ক পরা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। শুক্রবার একটি নির্দেশিকায় কাউন্টির বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে বেরোনো বা জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে লস এঞ্জেলিস কাউন্টি কর্তৃপক্ষ। আগামী ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই নির্দেশ বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে।