ছবি এএফপি
প্রতিদিন প্রায় দশ হাজার করে নতুন সংক্রমণের খবর আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এই পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোকেই দুষছেন দেশবাসী। মারণভাইরাস যে কী ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনতে পারে, তা কখনওই স্বীকার করেননি তিনি। দিন কয়েক আগেই বলেছেন, ‘‘করোনাভাইরাস একটা কল্পনামাত্র।’’ কখনওই লকডাউনকে সমর্থন করেননি প্রেসিডেন্ট। বরং শিল্পপতিদের ব্যবসা নিয়েই বেশি চিন্তিত তিনি। সংক্রমণ হাতের নাগাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় শেষমেশ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রতিটি রাজ্যের গভর্নর।
মার্চের শেষ থেকেই সাও পাওলোয় ওষুধের দোকান আর সুপারমার্কেট ছাড়া কিছুই খোলা নেই। স্থানীয় রেস্তরাঁগুলোয় শুধুমাত্র হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি চাল-ডাল পৌঁছে দিচ্ছে সুপারমার্কেটগুলো। এর ফলে অনেক বেকার ছেলেপুলে একটা সাইকেল থাকলেই কিছু রোজগার করে নিতে পারছে। তা ছাড়া, সরকার থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অল্পস্বল্প কিছু টাকাও দেওয়া হচ্ছে। গরিব অনেক পরিবারকে জলের বিল মকুব করে দেওয়া হয়েছে।
যে-হেতু রাস্তায় বেরোনোর উপরে কোনও রকমের নিষেধাজ্ঞা নেই, তাই লোকজনের যাতায়াত বা মেলামেশা কখনওই বিশেষ কমেনি। গত সপ্তাহ থেকে প্রত্যেককে মাস্ক পরে বেরোনোর নির্দেশ দিয়েছেন সাও পাওলোর গভর্নর। তার পর থেকে দেখছি, লোকজনের রাস্তায় বেরোনো একটু কমেছে। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে ব্রাজিলে কোনও স্বাস্থ্যমন্ত্রী নেই। গত এক মাসে বোলোসোনারো দু’জন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বদলেছেন। শোনা যাচ্ছে, সেনাবাহিনীর কোনও চিকিৎসককে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। সম্প্রতি বোলসোনারো বলেন, ‘‘যাঁরা ডানপন্থী তাঁদের হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া হবে আর যাঁরা বামপন্থী তাঁদের দেওয়া হবে তুবাইনা (সস্তার একটি বিয়ার)।’’ লকডাউন উঠিয়ে দেওয়ার সমর্থনে বোলসোমিনোরা (যাঁরা বোলসোনারোর পক্ষে) রবিবার বিনা মাস্কেই মিছিল করেন এবং তাঁদের দাবি, এই করোনাভাইরাস নাকি কমিউনিস্টদের তৈরি করা।
এক দিকে রাজনৈতিক টালমাটাল, অন্য দিকে করোনার দাপট। ব্রাজিল এখন কঠিনতম পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। (শেষ)
(লেখক সাও পাওলোয় কর্মরত শিক্ষক)