ব্রেক্সিট স্বপ্ন বেচে বিপুল জয় বরিসের

গোটা দেশে মোট ৬৫০টির মধ্যে কনজ়ারভেটিভরা পেয়েছে ৩৬৫টি আসন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ৩২৬-এর থেকে অনেকটাই বেশি।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:২৬
Share:

১০, ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে বরিস জনসন। এএফপি

মার্গারেট থ্যাচারের পরে বরিস জনসন। গত ২২ বছরে এই প্রথম এত বিপুল জয় পেল কনজ়ারভেটিভ দল। যার ফলে দু’টো বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে গেলেন ভোটদাতারা। এক, আগামী চার বছর ১০, ডাউনিং স্ট্রিটে থাকছেন বরিস। এবং দুই, ব্রিটেন জানুয়ারি মাসেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছাড়ছে।

Advertisement

গোটা দেশে মোট ৬৫০টির মধ্যে কনজ়ারভেটিভরা পেয়েছে ৩৬৫টি আসন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ৩২৬-এর থেকে অনেকটাই বেশি। ভোট-চিত্র স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে সকাল সওয়া সাতটায় ‘বিজয়ীর ভাষণে’ বরিস বলেন, ‘‘নতুন এক ভোরের সূচনা হল। আমাকে যাঁরা সমর্থন করেছেন, দিন-রাত খেটে আমি তাঁদের স্বপ্ন সফল করবই।’’ পরে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০, ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে তিনি বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরে শুধু ব্রেক্সিট নিয়েই ভেবে চলেছি আমরা। দেশবাসীকে আশ্বাস দিচ্ছি, ৩১ জানুয়ারি আমরা ইইউ ছাড়ছিই। অনেক কিছু নিয়ে নতুন করে ভাবার আছে। যার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা (এনএইচএস)। আগামী বছরটা ব্রিটেনের পক্ষে খুব ভাল। তাই এ বার বড়দিনের উৎসবে মাতুন আপনারা।’’

অন্য দিকে, ১৯৩৫-এর পরে এত খারাপ ফল কখনও করেনি লেবার। এ বার লেবারদের দখলে মাত্র ২০৩টি আসন। প্রাক্তন লেবার প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের আসন সেজফিল্ড বা একশো বছর ধরে লেবারদের দখলে থাকা গ্রিম্সবি-র মতো ঘাঁটিগুলোতেও করবিনরা হেরেছেন। কাল রাত দু’টো নাগাদই বোঝা গিয়েছিল, দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রের রং পাল্টাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডিসেম্বরে হঠাৎ নির্বাচনের ডাক দিয়ে বড়সড় জুয়ো খেলেছিলেন বরিসের। মূলত ওয়েলস, মধ্য ইংল্যান্ড এবং উত্তর ইংল্যান্ডের ব্রেক্সিট-পন্থী ভোটারদের সমর্থনের আশাতেই ভোটে লড়ছিলেন তিনি। আজ দেখা গেল, বাজি জিতেছেন প্রধানমন্ত্রীই।

Advertisement

কনজ়ারভেটিভ নেতা যেমন ভোটারদের সামনে স্পষ্ট ব্রেক্সিট-স্বপ্ন তুলে ধরতে পেরেছেন, ঠিক তাঁর উল্টো পথে হেঁটেছেন লেবার নেতা জেরেমি করবিন। ভোটের ফল বলে দিচ্ছে, প্রচারে কোনও দিশা ছিল না করবিনের। এ বারের নির্বাচন যে আসলে ব্রেক্সিট নির্বাচন, তা নিয়ে ভোটার বা নেতা, কোনও পক্ষেরই মনে কোনও সংশয় ছিল না। কিন্তু করবিন বা তাঁর দলের কোনও শীর্ষ নেতাকে যখনই ব্রেক্সিট নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, পাশ কাটিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। এমন কি করবিনকে যখন সোজাসুজি জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি কি ব্রেক্সিট চান, তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘‘এ বিষয়ে মন্তব্য করব ন।’’ পরে ব্যাখ্যা করেন, ফের গণভোট চান তাঁরা। সেই ব্রেক্সিটের বিপক্ষে ভোট পড়লে ঝামেলা মিটেই গেল। পক্ষে ফের ভোট পড়লে নতুন চুক্তি তৈরি করবে লেবার। তার পরে সেই চুক্তি নিয়ে যাওয়া হবে ইইউ-এর কাছে। গত দু’বছর ধরে তো এই টানাপড়েনের পথেই চলেছে ব্রিটেন! ভোটারেরা যে আর জট বাড়াতে চাননি, তা ভোটের ফলই বলে দিল। ‘ইইউ ছাড়তে চাই’ বলা ‘লিভ’ ভোটারেরা তো গত বারেও লেবারদের ভোট দেননি। এ বার দেখা গেল, ‘থেকে যেতে চাই’ বলা ‘রিমেন’ ভোটারদেরও হারিয়েছেন করবিন। ভোটের ফলকে অত্যন্ত হতাশজনক আখ্যা দিয়ে করবিন আজ জানান, আগামী সাধারণ নির্বাচনে আর লেবার দলের নেতৃত্ব দেবেন না তিনি।

কনজ়ারভেটিভরা যে-সব আসনে প্রার্থী দিয়েছিলেন, সেখানে তারা লড়বে না বলে জানিয়েছিল নাইজেল ফারাজের ব্রেক্সিট পার্টি। যার ফলে একটি আসনও জিততে পারেনি তারা। ভাল ফল করেনি লিবারাল ডেমোক্র্যাটেরাও। হেরে গিয়েছেন তাদের নেতা জো সুইনসনও। চমকপ্রদ সাফল্য পেয়েছে স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এসএনপি)। গত বারের থেকে ১৩টি বেশি পেয়ে স্কটল্যান্ডের ৫৯টি আসনের মধ্যে ৪৮টিই গিয়েছে তাদের দখলে। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার এবং এসএনপি নেত্রী নিকোলা স্টুজেরন প্রচারে বলেছিলেন, নতুন প্রধানমন্ত্রীকে তিনি স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার দাবিতে দ্বিতীয় গণভোটের আর্জি জানাবেন। আজ স্টুজেরন বলেন, ‘‘ইংল্যান্ড ইইউ ছেড়ে যেতে চায়, কিন্তু স্কটল্যান্ড যে চায় না, তা এই ফলাফল থেকেই স্পষ্ট। স্কটল্যান্ড কী করবে, সেই সিদ্ধান্ত স্কটল্যান্ডকেই নিতে দিক নতুন সরকার।’’

আজই রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা করে সরকার গড়ার অনুমতি চেয়েছেন জনসন। ১৯ তারিখ পার্লামেন্টে রানির বক্তৃতা। তারপরেই পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি পেশ করে সেটি পাশ করিয়ে নেওয়া হবে নতুন প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট শার্ল মিশেল-ও বলেছেন, ‘‘ব্রিটেনের সঙ্গে কথাবার্তা চূড়ান্ত করতে প্রস্তুত আমরা।’’

এখনও পর্যন্ত ঠিক রয়েছে, ৩১ জানুয়ারি ইইউ ছাড়বে ব্রিটেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement