US Colombia on Migrant Issue

আমেরিকার বিমান ফেরানোর পর নাটকীয় মোড়, ট্রাম্পের হুমকিতে নতিস্বীকার কলম্বিয়ার

শপথগ্রহণের পর থেকেই ট্রাম্পের একের পর এক সিদ্ধান্ত বিতর্কের জন্ম দিয়ে চলেছে। সম্প্রতি আমেরিকা থেকে বেআইনি অভিবাসীদের সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ট্রাম্প।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:০৪
Share:

(বাঁ দিকে) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আমেরিকার দু’টি সামরিক বিমান ফিরিয়ে দিয়েছিল কলম্বিয়া। আর তাতেই বদলে যেতে বসেছিল উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের যাবতীয় বাণিজ্যিক সমীকরণ। আপাতত সেই পরিবর্তন আটকানো গিয়েছে। কারণ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির পর নাটকীয় মোড় নিয়েছে ঘটনা পরম্পরা। নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে কলম্বিয়া। আমেরিকার বিমান ফেরত না-নিলেও অভিবাসীদের ফিরিয়ে নিয়েছে তারা।

Advertisement

বিমান ফেরানোর খেসারত

গত ২০ জানুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথগ্রহণ করেছেন ট্রাম্প। তার পর থেকেই তাঁর একের পর এক সিদ্ধান্ত বিতর্কের জন্ম দিয়ে চলেছে। সম্প্রতি আমেরিকা থেকে বেআইনি অভিবাসীদের সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ট্রাম্প। যে যেখান থেকে এসেছেন, তাঁদের সেখানে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওই অভিবাসীদের ‘ক্রিমিনাল’ বা অপরাধী বলে উল্লেখ করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। রবিবার কলম্বিয়ান অভিবাসীদের নিয়ে তেমনই দু’টি বিমান আমেরিকা থেকে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু কলম্বিয়া সেই বিমান দু’টিকে আটকে দেয়। কলম্বিয়ার মাটিতে সেগুলিকে নামার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই খবর পেয়েই ফুঁসে ওঠেন ট্রাম্প।

Advertisement

ট্রাম্পের পাঁচ দাওয়াই

নিজের সমাজমাধ্যম অ্যাকাউন্টে কলম্বিয়ার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। সেখানে তিনি কলম্বিয়ার উপর মোট পাঁচটি নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দেন। ট্রাম্প জানান—

  • কলম্বিয়া থেকে যে যে পণ্য আমেরিকায় যায়, তার উপর জরুরি ভিত্তিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এক সপ্তাহ পরে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৫০ শতাংশ।
  • কলম্বিয়ার সরকারি আধিকারিক, তাঁদের ঘনিষ্ঠ এবং সমর্থকদের উপর আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে তাঁদের ভিসা।
  • কলম্বিয়া সরকারের সমর্থক, রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ভিসা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হবে।
  • আমেরিকার সুরক্ষার স্বার্থে কলম্বিয়ান নাগরিক এবং সেখানকার যাবতীয় মালপত্রের উপর সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে।
  • কলম্বিয়ার উপর ইন্টারন্যাশনাল এমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ার্স অ্যাক্ট (আইইইপিএ) ট্রেজ়ারি-সহ যাবতীয় অর্থনৈতিক এবং ব্যাঙ্কিং নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।

ট্রাম্প বলেন, ‘‘সবে তো শুরু। কলম্বিয়া সরকার তাদের আইনি বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করছে, আমরা সেটা মেনে নেব না। ওরা যে অপরাধীদের আমাদের দেশে জোর করে ঢুকিয়ে দিয়েছিল, তাদের ফেরত নিতেই হবে।’’

পেত্রোর জবাব

ট্রাম্পের এই পোস্টের প্রেক্ষিতে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো পাল্টা একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন সমাজমাধ্যমে। সেখানে প্রায় প্রতি বাক্যে তিনি ট্রাম্পকে বিঁধেছেন। ইতিহাস তুলে ধরে নানা সময়ে আমেরিকার নানা নীতির সমালোচনা করেছেন। তাঁর পোস্টে উঠে এসেছে বর্ণবৈষম্যের প্রসঙ্গও। পেত্রো লিখেছেন, ‘‘ট্রাম্প, আপনি আমাকে মেরে ফেলতে পারেন। কিন্তু আমি আমার দেশের মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকব। আমাকে ছুড়ে ফেলুন, আপনার দেশের মানুষও আপনাকে ছুড়ে ফেলবে।’’ কলম্বিয়ার উপর ছড়ি ঘোরানোর ট্রাম্পের ইচ্ছা পূরণ হবে না বলেও জানিয়ে দেন পেত্রো। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে পেত্রো লেখেন, ‘‘আমি শুনলাম কলম্বিয়ার শ্রমিকদের হাতে উৎপন্ন ফসল আমেরিকায় প্রবেশের জন্য এখন থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। আমিও একই কাজ করছি।’’ অর্থাৎ, আমেরিকার পণ্য কলম্বিয়ায় প্রবেশেও শুল্ক আরোপের কথা জানান পেত্রো।

আপাতত সঙ্কটমুক্তি

শেষ পর্যন্ত অবশ্য শুল্ক আরোপ করা হয়নি কোনও তরফেই। কলম্বিয়া সরকারের তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আমেরিকা থেকে অভিবাসীদের দেশে ফেরানোর জন্য তারা একটি বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করেছে। এই বিবৃতির পর হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব পাল্টা বিবৃতি দিয়ে জানান, কলম্বিয়ার উপর আপাতত কোনও শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে না। আমেরিকা এবং কলম্বিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্কের অবনতি ঘটলে দুই মহাদেশের অন্য দেশগুলির উপরেও তার প্রভাব পড়তে পারত। তৈরি হতে পারত বাণিজ্যিক সঙ্কট। ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির পর অভিবাসীদের ফেরানোর বিষয়ে কলম্বিয়া যে অবস্থান বদল করল, আপাতত তাতেই কাজ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ট্রাম্পের দাপট

অনেকে বলছেন, ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই দাপুটে মেজাজে রয়েছেন ট্রাম্প। অপেক্ষাকৃত ‘দুর্বল’ দেশগুলিকে তিনি ‘টার্গেট’ করছেন। প্রতিবেশী কানাডা থেকে শুরু করে ব্রাজ়িল কিংবা ডেনমার্ক, ট্রাম্পের ‘হম্বিতম্বি’ জারি সব দেশেই। কানাডাকে তিনি আগেই কড়া বার্তা দিয়ে রেখেছেন। প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসার আগেই হাত বাড়িয়ে রেখেছিলেন গ্রিনল্যান্ডের দিকে। তা নিয়ে সম্প্রতি ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনের সঙ্গে বাদানুবাদ হয়েছে ট্রাম্পের। গ্রিনল্যান্ড আদতে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের একটি আধা স্বশাসিত দ্বীপ। এর উপর ইউরোপের ডেনমার্কের কর্তৃত্ব সর্বজনবিদিত। সেই দ্বীপ কিনতে চেয়েছে আমেরিকা। ফোন করে ড্যানিশ প্রধানমন্ত্রীকে ট্রাম্প হুমকিও দিয়েছেন বলে অভিযোগ। এ বার তাঁর হুমকির মুখে পিছু হটতে হল কলম্বিয়াকেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement