আমেরিকা না রাশিয়া, টিকার লড়াই চলছেই

মার্কিন আধিকারিকদের কথাতে ইঙ্গিত মেলে, রুশ ভ্যাকসিন গ্রহণ না-করলেও, তাদের পদাঙ্ক অনুসরণে বাধা নেই।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

জেনিভা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৬:০৩
Share:

ছবি সংগৃহীত।

বারবার করে সতর্ক করেই যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)— ‘প্রতিষেধক নিয়ে রাজনীতি করলে, তার দাম চোকাতে হবে গোটা দুনিয়াকে’। কিন্তু কে শোনে! রুশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে দিলেন, এ মাসেই বাজারে আসছে তাদের ‘বহু বিতর্কিত’ প্রতিষেধক ‘স্পুটনিক ভি’, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চূড়ান্ত রিপোর্ট হাতে আসার আগেই!

Advertisement

থেমে নেই আমেরিকাও। পাল্টা হুঙ্কার ছেড়েই যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগেই ঘোষণা করেছিলেন, রুশ ও চিনা প্রতিষেধক ছুঁয়েও দেখবে না তাঁর দেশ। কারণ হিসেবে ‘অসম্পূর্ণ ট্রায়াল’ উল্লেখ করেছিলেন। যদি দু’দিন আগে মার্কিন আধিকারিকদের কথাতে ইঙ্গিত মেলে, রুশ ভ্যাকসিন গ্রহণ না-করলেও, তাদের পদাঙ্ক অনুসরণে বাধা নেই। তাঁরা জানিয়েছিলেন, তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই মার্কিন সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটিকে সরকারি ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন। কোন সংস্থার ভ্যাকসিনটির কথা তাঁরা ভাবছেন, তা অবশ্য উল্লেখ করেননি কেউ। মঙ্গলবার আবার ট্রাম্প ঘোষণা করলেন, সুইডিশ-ব্রিটিশ সংস্থা অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার প্রতিষেধক চ্যাডক্স-১-কে আমেরিকায় তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অনুমতি দেওয়া হবে। ট্রাম্প বলেন, ‘‘এটা ঘোষণা করতে পেরে আমি খুশি। অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। যে সমস্ত ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শেষ পর্যায়ে, সেই তালিকাতেও অন্তর্ভূক্ত হয়েছে এই ভ্যাকসিন। আমেরিকায় আমরা এমন কিছু কাজ করে দেখাচ্ছি, যা মানুষের ধারণারও বাইরে।’’ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইনস্টিটিউট এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে ‘চ্যাডক্স-১’ ভ্যাকসিন। ভারতেও এর ট্রায়াল শুরুর অনুমতি পেয়েছে পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষেধকটি নিয়েই আশার বাণী শোনাচ্ছেন ট্রাম্প। অ্যাস্ট্রাজেনেকাও জানিয়েছে, আমেরিকা জুড়ে বিভিন্ন জাতি, উপজাতি ও নানা প্রান্তের ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ট্রায়ালে অংশ নেবেন। সকলেরই বয়স ১৮-র উপরে।

আরও পড়ুন: আবার লড়াই? প্রস্তুত ইটালি

Advertisement

কিন্তু সবশেষে ট্রাম্প দাবি করেন, যে প্রক্রিয়াটি (ভ্যাকসিন ট্রায়াল) শেষ করতে কয়েক বছর সময় লাগে, সেটা তাঁর সরকার কয়েক মাসের মধ্যে সেরে ফেলছে। এ থেকেই বিতর্কের গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে। গত রবিবার ‘ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর প্রধান স্টিফেন হানের দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানা যায়, জরুরি পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে পরীক্ষাধীন ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ভাবছে মার্কিন প্রশাসন। এক দিন বাদ দিয়েই অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণায়, ফের সন্দেহ দানা বাঁধছে, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এই ‘হাঁকডাক’ নয় তো! যদিও সাক্ষাৎকারে হান জানিয়েছিলেন, উপরমহল থেকে তাদের কোনও চাপ দেওয়া হচ্ছে না। মার্কিন এপিডেমিয়োলজিস্ট অ্যান্টনি ফাউচি অবশ্য আজ ট্রাম্পকে একপ্রকার সমর্থন জানিয়েই বলেছেন, ‘‘যে দ্রুত গতিতে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে, তাতে নির্ধারিত সময়ের আগেই রিপোর্ট পেয়ে যাব আমরা।’’

ও দিকে, মস্কোর একটি সংবাদপত্র রুশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাসকোকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরেই শুরু হয়ে যাচ্ছে প্রতিষেধক সরবরাহ। তবে আপাতত তা রাশিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। স্কুল-কলেজ খুলে গিয়েছে রাশিয়ায়। প্রশাসন চায়, চিকিৎসক ও শিক্ষকদের আগে ‘স্পুটনিক ভি’ ভ্যাকসিন দেওয়া হোক। কিন্তু ট্রায়াল শেষ না হওয়ায় তাঁদের অনেকেই প্রতিষেধক নিতে রাজি হচ্ছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement