সেই ঐতিহাসিক সিল্ক রুট।
শিয়রে শমন চিন!
আর সেই চিনের অন্যতম প্রধান লক্ষটাই হল কয়েক হাজার বছরের পুরনো, ঐতিহ্যবাহী ‘সিল্ক রুট’কে আবার যত তাডাতাড়ি সম্ভব, চালু করা। আর তা করতে গেলে, কয়েক হাজার বছর আগে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় যে দেশগুলির মধ্যে দিয়ে চালু ছিল ওই ‘সিল্ক রুট’, সেই দেশগুলির কাছ থেকে তড়িঘড়ি সম্মতি আদায় করে নেওয়াটা খুব দরকার বেজিংয়ের। তার ব্যাবসা, বাণিজ্য ও অস্ত্র বাণিজ্যের সম্প্রসারণের জন্য।
কিন্তু, ধুরন্ধর সেই চিনা ‘ফন্দি’তে এখন রীতিমতো প্রমাদ গণছে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি। সিঁদুরে মেঘ দেখছে দিল্লি! একই অবস্থা তুরস্ক, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, এমনকী পাকিস্তানেরও।
চিনের ‘ব্যবসা-বাণিজ্যের লালসা’ মেটাতে এ বার যায় যায় অবস্থা হয়েছে এক সময় ‘সিল্ক রুটে’ থাকা ছোট দেশগুলির। দিল্লির দুশ্চিন্তাও কম নয়। কারণ, এই রুট ফের চালু হলে জঙ্গি হানাদারির আশঙ্কা আরও বেড়ে যাবে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে সহজে যোগাযোগের নতুন নতুন পথ খুলে যাবে। যার সুযোগ নেবে জঙ্গিরা। একেই জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে দিল্লির উদ্বেগ কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়ে উঠবে ওই ‘সিল্ক রুট’। তাতে জম্মু-কাশ্মীরে হানাদারির ঘটনার শঙ্কা তো বেড়ে যাবেই, ওই পথ দিয়ে সন্ত্রাসবাদী, আল-কায়েদা, আইএস জঙ্গিদের ঢোকার সম্ভাবনা ও সেখান থেকে তাদের ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সহ অন্যান্য প্রান্তে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।
তাতে অবশ্য বয়েই গিয়েছে বেজিংয়ের! জের ব্যবসা-বাণিজ্য, অস্ত্র বাজার বাড়াতে তাই প্রতিবেশী দেশগুলিকে ‘রেশমি সুতো’য় বাঁধতে চাইছে চিন।
এক হাজার বছরেরও বেশি আগে রমরমিয়ে চালু থাকা ‘সিল্ক রুট’ আবার সাত তাড়াতাড়ি চালু করতে চাইছে বেজিং। সিল্ক রুটের যে পথে গিয়েছিলেন মার্কো পোলো। ১২৭১ থেকে ১২৯৫ খ্রিস্টাব্দে। ঐতিহ্যবাহী ওই রুট ধরে এক সময় কতই না ব্যবসা, বাণিজ্য হয়েছে চিন, ভারত, আফগানিস্তানের মধ্যে। কিন্বিতু, এখন চিনের ব্যবসা, বাণিজ্য বাড়ানোর ইচ্ছাই আশঙ্কা বাড়াচ্ছে এক সময়ের ‘সিল্ক রুটে’ থাকা ছোট দেশগুলির। কারণ, ওই রুট চালু হলে জঙ্গি সন্ত্রাসের আশঙ্কা অনেক বেশি বেড়ে যাবে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির। অনেক আলগা হয়ে যাবে দেশগুলির জোরালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তা ছাড়াও বেজিংয়ের কাঙ্খিত ‘সিল্ক রুট’ ফের চালুর প্রয়াসে শরিক হয়ে আমেরিকা ও ফ্রান্স, জার্মানি সহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে চটাতে চাইছে না মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি।
১২৭১ থেকে ১২৯৫ সাল- সিল্ক রুটে যে পথ ধরে গিয়েছিলেন মার্কো পোলো।
ইউক্রেনের ঘটনার পর থেকেই চিনের সঙ্গে ভাবসাব বাড়িয়ে চলেছে তুরস্ক। তাই বেজিংয়ের ‘সিল্ক রুট’ চালুর প্রয়াসে গোড়া থেকেই সায় ছিল তুরস্কের। কিন্তু তাতে ‘ন্যাটো’ জোটে ভিত নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে সদস্য দেশ তুরস্কের। বেজিংয়ের সঙ্গে কেন এত ‘ভাব-ভালবাসা’ তুরস্কের, তা নিয়ে কথা চালাচালি শুরু হয়ে গিয়েছে ‘ন্যাটো’ জোটের দেশগুলির মধ্যে। গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া হয়েছে, সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র বানানোর জন্য একচি চিনা রাষ্ট্রায়ত্ত অস্ত্র নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে তুরস্কের চুক্তি। প্রায় একই অবস্থা হয়েছে কাজাখস্তান ও কিরঘিজস্তানের।