অভিজাত পরমাণু পরিবারের সদস্য হওয়ার আশা আপাতত মুখ থুবড়ে পড়ল। বহু দৌত্য সত্ত্বেও চিনের প্রাচীর পেরোতে পারল না ভারত। তবে চলতি বছরের মধ্যেই আশাপূরণ হতে পারে বলে আশ্বাস দিয়েছে আমেরিকা।
সোলে এনএসজি-র প্লেনারি বৈঠকেই যে ভারতের সদস্যপদ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নাও হতে পারে, তা জানতেন ভারতীয় কূটনীতিকরা। কিন্তু চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অনুরোধ করার পরেও বেজিং আগ্রাসী মনোভাব নেওয়ায় কিছুটা হলেও বিস্মিত সাউথ ব্লক। আজ প্লেনারির শেষ দিনে ভারতকে আপাতত সদস্য না করার সিদ্ধান্ত নেয় এনএসজি। তার পরে আর রাখঢাক না করে বিদেশ মন্ত্রক সরাসরি জানিয়ে দেয়, একটি মাত্র দেশই বার বার প্রক্রিয়াগত বাধা তুলেছে। নাম না করলেও ইঙ্গিত যে চিনের দিকে তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
ভারত পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। সেই যুক্তিতেই ভারতের সদস্যপদ নিয়ে আপত্তি তুলেছে বেজিং। পাল্টা যুক্তি হিসেবে পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধে ভারতের রেকর্ড খতিয়ে দেখার কথা বলেছে সাউথ ব্লক। এ দিনও বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেন, ‘‘ভারত যে পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তা এনএসজি ২০০৮ সালে মেনে নিয়েছিল। ভারতের সদস্যপদ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন বলেও তখন মেনে নিয়েছিল সদস্য দেশগুলি। তাই এনপিটিতে স্বাক্ষর না করার
সঙ্গে এনএসজি-তে যোগ দেওয়ার কোনও বিরোধ আছে বলে আমরা মনে করি না।’’
তবে শুধু চিন নয়, আরও কিছু দেশের মনোভাবেও বিস্মিত ভারত। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, এনএসজি-র ৪৮টি সদস্য দেশের মধ্যে ৩৮টি ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আয়ার্ল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড-সহ তিনটি দেশ দাবি করে, এনপিটিতে স্বাক্ষরকারী নয় এমন দেশ কী শর্তে এনএসজি-র সদস্য হতে পারে তা আগে স্থির করা হোক। তার পরে ভারতকে নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আবার সুইৎজারল্যান্ড, ব্রাজিল-সহ ছ’টি দেশ দাবি করে, এই দু’টি বিষয়ে একসঙ্গে আলোচনা হোক। সুইৎজারল্যান্ড ভারতকে সমর্থন করার আশ্বাস দিয়েছিল। তার পরেও তাদের এই অবস্থানের ব্যাখ্যা এখনও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন কূটনীতিকরা। আবার ব্রাজিল জানিয়েছে, তারা ভারতের পাশে আছে। কিন্তু এনপিটি-তে স্বাক্ষরকারী নয় এমন দেশগুলির এনএসজি-তে যোগ দেওয়ার একটি সাধারণ শর্ত আগে স্থির করা প্রয়োজন।
তবে চলতি বছরের মধ্যেই ভারত এনএসজি-র সদস্যপদ পাবে বলে ধারণা বারাক ওবামা প্রশাসনের। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্তার কথায়, ‘‘আমরা সোল বৈঠকে ভারতের সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা চেয়েছিলাম। সেই বিষয়ে একটি পথের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এখনও কিছু কাজ বাকি আছে। কিন্তু চলতি বছরের মধ্যেই ভারত সদস্য হয়ে যাবে বলে আমরা মনে করি।’’ কোন পথে আমেরিকা এগোতে চায় তা অবশ্য জানাতে রাজি হননি তিনি।
বিষয়টি নিয়ে এ দিন নরেন্দ্র মোদী সরকারকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি কংগ্রেস। দলীয় নেতা আনন্দ শর্মার কথায়, ‘‘এনএসজি নিয়ে হঠাৎ মরিয়া হয়ে উঠে কেন সরকার ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে এক সারিতে বসিয়ে দিল তা জানি না। তবে প্রধানমন্ত্রীর বোঝা উচিত কূটনীতিতে গভীরতা প্রয়োজন। এটা বাজারে তামাশা করার বিষয় নয়।’’