কানাডার সফররত প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার, দিল্লিতে।
ভারত যে কোনও ভাবেই জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ মেনে নেবে না, কানাডার সফররত প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পাশে বসে তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মূলত, স্বর্ণমন্দিরের ঘটনার সময় থেকেই পঞ্জাবের খলিস্তানপন্থীদের ‘স্বর্গরাজ্য’ হয়ে ওঠে কানাডা। কানাডায় থাকা খলিস্তানপন্থীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর ঘনিষ্ঠতার অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিতর্ক হয়েছে বহু বার। সেই বিতর্ক ফের দেখা দিয়েছে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর এ বারের সপরিবার ভারত সফরেও। মুম্বইয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি তোলা একটি ছবিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী সোফিয়া গ্রেগোয়ার ট্রুডোর সঙ্গে দেখা গিয়েছে দোষী সাব্যস্ত খলিস্তানি জঙ্গি জশপাল অটওয়ালকে।
সেই বিতর্কের রেশ না কাটলেও শুক্রবার শক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা-সহ মোট ৬টি চুক্তি হয়েছে ভারত ও কানাডার মধ্যে। গুরুত্ব পেয়েছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা সম্পর্ক, অসামরিক ক্ষেত্রে পরমাণু সহযোগিতা, শিক্ষা, মহাকাশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলি।
এ দিন মুখোমুখি বৈঠক শুরু হওয়ার আগে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোকে বুকে জড়িয়ে ধরে (‘বেয়ার হাগ) অভ্যর্থনা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তার পর ট্রুডোর স্ত্রী সোফিয়া ও তাঁদের তিন সন্তানের সঙ্গে ছবি তোলেন নরেন্দ্র মোদী।
আরও পড়ুন- সফরভর উপেক্ষা, শেষ লগ্নে টুইট-বার্তা প্রধানমন্ত্রীর
আরও দেখুন- দুর্নীতির তালিকায় চিনকে টেক্কা দিল ভারত
দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীদের মুখোমুখি বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘‘আমরা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সমেত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেছি। সন্ত্রাসবাদ ও কট্টরবাদ আমাদের মতো দেশগুলির পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক। আর তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যই আমাদের একজোট হওয়া প্রয়োজন।’’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী এ-ও জানিয়ে দেন, রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ধর্মের অপব্যবহার ও বিচ্ছিন্নতাবাদকে মদত দেওয়া কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, ‘‘আমরা দু’দেশের নাগরিকদের মধ্যে যোগাযোগকে নিবিড়তর করে তোলার উপরেও জোর দিয়েছি। ১৩ লক্ষ ভারতীয় বংশোদ্ভূত থাকেন কানাডায়। তাঁদের স্বার্থরক্ষার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।’’
কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো সপরিবার অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে যান গত বুধবার। সেখানে তাঁরা ‘করসেবা’ করেন। স্বর্ণমন্দিরের শেফ বিকাশ খন্নার তত্ত্বাবধানে রুটি বানাতে দেখা যায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের। ওই দিনই দিল্লিতে শিল্পপতিদের সঙ্গে একটি বৈঠকের পর কানাডার প্রধানমন্ত্রী যান জামা মসজিদে। সেখান থেকে মডার্ন হাইস্কুলের মাঠে গিয়ে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেন তিনি।
তবে মুম্বইয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী সোফিয়া ও মন্ত্রী অমরজিত সোহির সঙ্গে তোলা ছবিতে দোষী সাব্যস্ত খলিস্তানি জঙ্গি জশপাল অটওয়ালকে দেখা যাওয়ায় যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, তার প্রেক্ষিতে দিল্লির ‘কানাডা হাউস’-এ গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর দেওয়া নৈশভোজে আমন্ত্রিতদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় অটওয়ালের নাম।
সাত দিনের ভারত সফরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী সপরিবার গিয়েছেন তাজমহলে। তাঁরা গুজরাতের সবরমতীতে মহাত্মা গাঁধীর আশ্রমেও যান। মুম্বইয়ে শাহরুখ খান ও আমির খানের সঙ্গেও দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো ও তাঁর পরিবারের সদস্যেরা।