Umbrella Villege

ঠিক সিনেমার মতো! বলছে ‘ছাতা গ্রাম’

ঘাটাল থেকে ৭-৮ কিলোমিটারের পথ আলুই। ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়ক ধরে সিংহডাঙা পেরিয়ে বাম দিকে কিছুটা গেলেই পড়বে ওই গ্রাম। ঘাটাল ব্লকের মোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই গ্রামে শতাধিক পরিবার বাস করেন।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৪৯
Share:

আলুই উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে গ্রামবাসীদের জটলা। —নিজস্ব চিত্র।

গ্রামটির পরিচয় ছাতা তৈরির জন্য। প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিয়ে নানান আধুনিক ডিজাইনের ছাতা তৈরি হয় সেখানে। মহিলাদের একাংশ সংসারের কাজ সামলে ছাতা তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন। গ্রামের তরুণ প্রজন্মের অনেকেও কলকাতার বিভিন্ন ছাতা তৈরির সংস্থায় কাজ করেন। ঘাটালের ‘ছাতা গ্রাম’ আলুই এখন চর্চায়। তবে ছাতা তৈরির জন্য নয়, দুষ্কৃতী যোগে। রবিবার ওই গ্রামের এক বাড়ি থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে আন্তঃরাজ্য দুষ্কৃতী চক্র। তারপরেই বদলে গিয়েছে আলুইয়ের পরিস্থিতি।

Advertisement

ঘাটাল থেকে ৭-৮ কিলোমিটারের পথ আলুই। ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়ক ধরে সিংহডাঙা পেরিয়ে বাম দিকে কিছুটা গেলেই পড়বে ওই গ্রাম। ঘাটাল ব্লকের মোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই গ্রামে শতাধিক পরিবার বাস করেন। গ্রামের মাঝে রয়েছে একটি হাইস্কুল। ডাকঘরও আছে। এমনিতে বেশ সম্পন্ন গ্রাম। মূলত ছাতা তৈরির কাজ হয়। শান্তিপ্রিয় ওই গ্রামে এর আগে বড় কোনও অপরাধের ঘটনার কথা মনে করতে পারছেন না সেখানকার বাসিন্দারা।

রাজনৈতিক অশান্তিও সেভাবে হয় না। সেই গ্রামেই এখন চাপা আতঙ্ক। অপরিচিত কাউকে দেখলে এড়িয়ে চলছেন অনেকেই। স্থানীয় বাসিন্দা অজিত দোলই, সত্যকিঙ্কর ভুঁইয়া বলছিলেন, “রবিবার পুলিশ যে ভাবে গ্রাম ঘিরে ডাকাতদের তুলে নিয়ে গেল, সেটা তো সিনেমার পর্দায় দেখতাম।”

Advertisement

ওই গ্রামের বাসিন্দা তথা স্থানীয় এক স্কুলের শিক্ষক কিঙ্কর দোলই বলেন, “অনেকের কাছেই এখন আমাদের গ্রাম আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলা পুলিশকে ধন্যবাদ। পুলিশের তৎপরতায় দুষ্কৃতীদের এত বড় পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে।” মন্টু দোলই নামে ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দার আক্ষেপ, “এই প্রথম আমাদের গ্রামের বদনাম হল। আমরা কারও সাতেপাঁচে থাকি না। শান্ত এলাকা। নিজেদের কাজ নিয়ে সবাই ব্যস্ত থাকি। রবিবার পুলিশ গ্রাম ঘিরে ফেলতেই এত বড় চক্রান্তের কথা জানতে পারি।” দিপালী দোলই নামে এক মহিলা জানালেন, ওই ঘটনার পরে গোটা গ্রাম আতঙ্কে রয়েছে। সন্ধ্যার পর সবাই বাড়ি ঢুকে পড়ছে। পুলিশও টহল দিচ্ছে। পুলিশের গাড়ি ঘুরছে।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, “আতঙ্কের কিছু নেই। নির্ভয়ে থাকুন। দুষ্কৃতীরা সবাই ধরা পড়েছে। ওই এলাকায় পুলিশি নজরদারি রয়েছে।”

স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, ওই দুষ্কৃতী চক্রের স্থানীয় ‘মাথা’ কমল রানাদের আদি বাড়ি ঝাড়গ্রামে। এক আত্মীয়ের সূত্রে বছর কুড়ি আগে আলুই গ্রামে এসেছিল তারা। সরকারি প্রকল্পের টাকায় তৈরি ছোট একটি বাড়িতে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে থাকত কমল। টাকা ধার নিয়ে শোধ দিতে না পারায় কমলের বাবা-মা দু’জনেই ফেরার। তার দুই দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে।

কমল আগে ঘাটালে অ্যাম্বুল্যান্স চালাত। মাঝে পকসো মামলায় গ্রেফতার হয়। জামিন পেয়ে ট্রাক চালাত। কমলকে জেল থেকে ছাড়াবার জন্যই তার বাবা-মা টাকা ধার করেছিল বলে খবর। গ্রামে কান পাতলেই কমলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শোনা গেল।

অনেকেই বললেন, স্ত্রীকে নিয়মিত মারধর করত সে। সংসারে টাকা দিত না। মদ্যপান করে বাড়ি ফিরত। তবে সে যে সরাসরি দুষ্কৃতী চক্রের সঙ্গেও যুক্ত, তা গ্রামের কেউ টের পায়নি বলে জানালেন ওই গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ কালসার, অমল দোলই, শ্যামল পুঁইলারা।

রবিবার এসটিএফের কাছে খবর পেয়ে আলুই গ্রামেই অভিযান চালায় জেলা পুলিশ। একাধিক দলে ভাগ হয়ে গ্রামটিকে ঘিরে ফেলা হয়। তারপর কমলের বাড়ি থেকেই গ্রেফতার হয় আন্তঃরাজ্য দুষ্কৃতী চক্রের ১৩ জন। ওই চক্রের মূল মাথা রঞ্জিত দাসের সঙ্গে কমলের আলাপ হয়েছিল মেদিনীপুর সংশোধনাগারে থাকাকালীন। তাদের সঙ্গী হয়েছিল আলুইয়েরই বাসিন্দা অরুণাভ চৌধুরী ওরফে ডিস্কো নামে এক যুবক। অরুণাভ অবশ্য এখন ঘাটালের রাধানগরে থাকে। ওই তিন জন মিলে এক দিনে (সোমবার) সার ব্যবসায়ী বাড়ি, ট্রাক ও ব্যাঙ্ক লুটের পরিকল্পনা নিয়েছিল। সেই উদ্দেশ্যে ঝাড়খণ্ড ও বিহার থেকে আনা হয়েছিল বাকি দুষ্কৃতীদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement