শি চিনফিং সরকারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর। ছবি: সংগৃহীত।
চিনের সঙ্গে কানাডার টানাপড়েনে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও তলানিতে গিয়ে ঠেকল। শি চিনফিং সরকারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ হিসাবে এ বার হংকংয়ের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি স্থগিত করল কানাডা। এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, চিনের সঙ্গে সম্পর্কের পরিধি সীমাবদ্ধ করার জন্যই এই পদক্ষেপ করেছে কানাডা। পাশাপাশি, গত মে মাসে হংকংয়ের উপর রাশ টানতে একটি বিতর্কিত নিরাপত্তা বিল পাশ করেছে চিন। আগামী অগস্টে তা আইনে পরিণত হলে হংকংয়ের বাসিন্দাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব আরও ক্ষুণ্ণ হবে বলে মনে করছেন অনেকে। সেই সঙ্গে ওই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উপর চিনের কব্জা আরও আঁটোসাঁটো হবে বলে মত কূটনীতিক মহলের। যদিও চিনের যুক্তি, হংকংয়ের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে জন্যই এই নতুন বিলটি পাশ করা হয়েছে। ওই বিলটি নিয়ে বরাবরই সরব কানাডা। কূটনীতিক মহলের মতে, প্রত্যর্পণ চুক্তি স্থগিত করার নেপথ্যে ওই বিষয়টিও ইন্ধন জুগিয়েছে। এ দিন নিজের সরকারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা পর ট্রুডো বলেন, “হংকংয়ে কোনও রকম স্পর্শকাতর সেনাপণ্য সরবরাহ রফতানির অনুমোদন করবে না কানাডা। এবং অবিলম্বে তা কার্যকর করা হবে।” হংকংয়ে ওই সেনাপণ্য সরবরাহ করার অর্থ যে তা চিনের মূল ভূখণ্ডের জন্য পাঠানো, এমনটাই মনে করেন ট্রুডো।
কানাডার এই পদক্ষেপে স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ চিন সরকার। অন্য দিকে, হংকংয়ের সরকারি আধিকারিকেরা এই পদক্ষেপে হতাশ বলে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে ফের সেনা অভ্যুত্থানের ছক? ৩ জেনারেল-সহ সেনার ৬০ অফিসার বরখাস্ত!
চিনের সঙ্গে কানাডার সম্পর্কে তিক্ততা অবশ্য নতুন ঘটনা নয়। ২০১৮ থেকেই দু’দেশের সম্পর্কে টানাপড়েনের শুরু। সে বছর মার্কিন সরকারের অনুরোধে হুয়াওয়েই-এর চিফ ফাইনান্সিয়াল অফিসার মেং ওয়ানঝৌকে গ্রেফতার করেছিল কানাডা। ইরানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করার অভিযোগে মার্কিন সরকার মেংকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। এর পর আমেরিকার সমনের আওতায় মেংকে গ্রেফতার করে কানাডা। তবে ওই ঘটনাকে সুনজরে দেখেনি চিন। মেং-এর গ্রেফতারির পর কানাডার নাগরিক তথা প্রাক্তন কূটনীতিক মাইকেল কোভরি এবং মাইকেল স্প্যাভর নামে এক কানাডীয় ব্যবসায়ীকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করে চিন।কানাডীয় দুই নাগরিককে গ্রেফতারির ১৮ মাসের বেশি কেটে গেলেও ওই দু’জনকে নিজেদের দূতাবাসের সাহায্য নিতে দেয়নি চিন। অনেকের মতে, কূটনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে ওই পদক্ষেপ করেছিল চিন। অন্য দিকে, ওই গ্রেফতারির ঘটনায় কানাডায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়। কানাডার মতে, টোপ হিসাবে ব্যবহার করতেই তাদের দেশের নাগরিককে গ্রেফতার করেছে চিন সরকার।
আরও পড়ুন: দেশে ফিরতে হবে না তো, উৎকণ্ঠায় সুমিত-শালিনীরা
চিনের কমিউনিস্ট পার্টির ঘনিষ্ঠ তথা হুয়াওয়েই-এর অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক মেং-এর মুক্তির জন্য চিনের চাপের কাছে নতিস্বীকার করেনি কানাডীয় সরকার। বরং চিনের ‘পণবন্দির কূটনীতি’র চেষ্টার পর্দাফাঁস করে দিয়েছেন ট্রুডো। তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন, “চিন সরকার যদি মনে করে, (আমাদের) নাগরিকদের আটকে রেখে কানাডা বা তার সরকারের বিরুদ্ধে ফায়দা তুলতে পারবে, তা হলে (চিনে) কোনও কানাডীয়ই সুরক্ষিত নন।” এর ফলে যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সরকারও নিজেদের কূটনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যে কোনও কানাডীয়কে গ্রেফতারির পন্থা নিতে পারে, তা মনে করেন ট্রুডো। বেজিংকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, “চিনকে এটা জানাতে চাই, কানাডার নাগরিককে গ্রেফতার করে এবং তার বদলে কানাডা থেকে যা খুশি চাইলেই মিলবে— এটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।” সেই সঙ্গে চিনের কাছে এক বার নতিস্বীকার করলেই যে তাদের সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে চাপ সৃষ্টি করবে শি চিনফিং সরকার, তা-ও মনে করে কানাডা।