পার্লামেন্ট হিলের কাছে বিক্ষোভকারীদের মিছিল। কানাডার অটোয়ায়। রয়টার্স
করোনা প্রতিষেধক বাধ্যতামূলক করার প্রতিবাদে উত্তাল কানাডা। গত কাল দেশের রাজধানীতে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে প্রতিবাদ দেখান। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে টিকাকরণ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। মাস্ক পরা এবং লকডাউনের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো যে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সপরিবারে আত্মগোপন করেছেন। তাঁর অবস্থান সম্পর্কে জানাতে অস্বীকার করেছে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দফতর।
করোনা অতিমারি রুখতে ট্রুডো সরকার কানাডায় প্রতিষেধক বাধ্যতামূলক করেছে। নয়া নিয়মে আমেরিকা-কানাডা সীমান্ত পারাপারের সময় ট্রাক চালকদের টিকাকরণের শংসাপত্র দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর পরেই দেশ জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বহু সাধারণ মানুষও। বিক্ষোভকারীদের দাবি, সরকার কাউকে টিকা নিতে বাধ্য করতে পারবে না। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে তাঁরা ফ্যাসিবাদী মানসিকতা বলে চিহ্নিত করেছেন। কানাডার জাতীয় পতাকার পাশে নাৎসিদের প্রতীক এঁকে গত কাল বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন অনেকে। বিক্ষোভের মূলকেন্দ্র পার্লামেন্ট হিলসে নানা প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির হয়েছেন বহু সাধারণ মানুষও। তাতে লেখা ছিল, ‘মেক কানাডা গ্রেট এগেন’, ‘উই আর হিয়ার ফর আওয়ার ফ্রিডম’।
অটোয়ার সংলগ্ন এলাকা থেকে এসে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন ৫২ বছরের টম পিপ্পিন। তিনি বলেন, ‘‘ছুটির দিনেও কোথাও যেতে পারছি না। না পারছি রেস্তরাঁয় যেতে, না পারছি সিনেমা দেখতে, ঘুরতে যেতে। এই অবস্থা আর সহ্য করা যাচ্ছে না।’’ বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক মহিলার বক্তব্য, ‘‘জানি স্বাস্থ্যবিধির জন্যই টিকা ও অন্যান্য বিধিনিষেধ। কিন্তু জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে এমন বিধিনিষেধ মানা যায় না।’’ বিক্ষোভকারীদের একটা বড় অংশ ট্রাক চালক। ইতিমধ্যেই তাঁরা খালি পায়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। অটোয়ার মেয়র জিম ওয়াটসনের টুইট, ‘‘সৈনিকের সমাধি ও জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধ আমাদের দেশের পবিত্র স্থান। যাঁরা কানাডার জন্য লড়াই করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা উচিত। সকলের কাছে আবেদন, সেই শ্রদ্ধা যেন বজায় থাকে।’’ বিক্ষোভকারীরা গত কাল ওই জায়গা দু’টিতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন।
বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর প্রতি। তাঁর সরকারি বাসভবনের চার কিলোমিটার দূরে আন্দোলনের ভরকেন্দ্র। বিক্ষোভের তীব্রতা অনুমান করে প্রধানমন্ত্রীকে ‘গোপন’ কোনও জায়গায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ট্রুডো সপরিবারে কোথায় রয়েছেন, তা অবশ্য জানানো হয়নি। সূত্রের খবর, নিরাপত্তার দিকে নজর রেখেই প্রধানমন্ত্রীকে অন্যত্র সরানো হয়েছে। সম্প্রতি ট্রুডোর এক সন্তান করোনা আক্রান্ত হওয়ায় বিচ্ছিন্নবাসে ছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী।