ছবি: এএফপি।
ভোর ছ’টায় চমকে উঠে ঘুমটা ভেঙে গেল। জানলা দিয়ে আলোর ঝলকানি। আর পরের মুহূর্তেই মারাত্মক মেঘের গর্জন। পাশে শোওয়া মেয়েকে ফিরে দেখলাম। ঠিকঠাক ঘুমোচ্ছে। হারিকেন ফ্লোরেন্সের ভয়ে কাল রাতে আমাদের সঙ্গে এসে শুয়েছে। ওকে ঘুমোতে দেখে উঠে বাইরে গেলাম। মনে হল কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। কালকের চেয়েও জোরে হাওয়া দিচ্ছে। বেশ ঠান্ডা। আর ঘুম এল না। ফ্লোরেন্স শুনলাম এখন ক্যাটেগরি ১।
উইলমিংটনের পশ্চিমে রাইটসভিল বিচ-এ আজ আছড়ে পড়েছে সে। অসংখ্য গাছ উপড়ে গিয়েছে। আর তার জেরে বিদ্যুতের লাইন পুরোপুরি বিপর্যস্ত। ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। নর্থ ক্যারোলাইনার নিউ বার্ন শহর এখন ৫ ফুট জলের নীচে। হাসপাতালে যাঁরা ভর্তি, তাঁদেরও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শার্লটে আবার বলা হয়েছে, খুব জরুরি না হলে ৯১১-এ ফোন না করতে। হারিকেনে ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয়শিবির খুঁজে বার করে দিতে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ আনা হয়েছে। এরই মধ্যে শিবিরগুলোতে যেতে বাধ্য হয়েছেন ২৬ হাজার মানুষ।
বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম দৈত্যাকার মেঘ সব সর্পিল গতিতে এগিয়ে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বাতিল করা হয়েছে আগামী সোমবার পর্যন্ত। তার মানে আরও তিন দিন এই অবস্থা চলবে বলেই আশঙ্কা করছে প্রশাসন। চিন্তা তাই কাটছে না। মার্টল বিচ-এ আবার সমুদ্রে কোনও ঢেউই নেই। অদ্ভুত লাগছে। হারিকেন নাকি ঘুরছে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে। তাই সমুদ্রের জলকে ঠেলে দিচ্ছে সমুদ্রের দিকেই। কিন্তু পরে এটাই আবার উল্টে যাবে। ভয়াল হয়ে ফিরে আসবে জল।
এই অবস্থায় গবেষণার কাজেও মন বসছে না। গুগল-এ খুঁজে দেখলাম দোকান খোলা আছে। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। কিছু কেনাকাটার দরকার ছিল। রাস্তায় পুলিশের অসংখ্য গাড়ি। প্রচুর মানুষ পশ্চিমের দিকে পালাচ্ছে। দৃশ্যটা গত কালের চেয়েও ভীতিপ্রদ। হাওয়ার দাপটে গাড়ি নিয়ে সোজা এগোতে পারছিলাম না। লেন থেকে সরে যাচ্ছে চাকা। কোনওমতে সাবধানে বাড়ি ফিরলাম।
ফ্লোরেন্সের কেন্দ্র এখন আরও এক দিন নর্থ ও সাউথ ক্যারোলাইনাতেই থাকবে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। নিউ বার্নে জল আরও বাড়ছে। দু’শো লোককে উদ্ধার করা হয়েছে ওখান থেকে। শুনছি জল বেড়ে ১০ ফুট ছুঁতে পারে। ওখানে ১৫০ জন আটকে রয়েছে এখনও। পুলিশ জানিয়েছে, দরকারে বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিতে। জ্যাকসনভিলে একটি হোটেলের ছাদও ভেঙে গিয়েছে। ৬০ জনকে বার করতে হয়েছে ওখান থেকে। বাতিল হয়েছে ১৩০০ উড়ান।
রাস্তাগুলো স্রোতে ভাসছে। নর্থ ক্যারোলাইনার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এবং সাউথ ক্যারোলাইনার পূর্ব দিকে গুটিগুটি পায়ে এগোচ্ছে হারিকেন। এই সব এলাকায় ভয়ঙ্কর
হাওয়া আর বৃষ্টি চলবে। ভয় দেখাচ্ছে হড়পা বানও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জরুরি বিভাগ, উদ্ধারকারী কর্মীদের।
(সাউথ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রোফেসর)