প্রতীকী চিত্র।
২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থা, পরিবহণ— পশ্চিমের দেশগুলোর সর্বত্র একের পর এক সাইবার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়ার সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ‘জিআরইউ’। বৃহস্পতিবার এমনটাই দাবি করা হয়েছে ব্রিটেনের একটি রিপোর্টে। স্বাভাবিক ভাবেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে মস্কো।
ব্রিটেনের ‘ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার’-এর রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এক দল হ্যাকারকে ব্যবহার করে গোটা পৃথিবী জুড়ে মারাত্মক সাইবার হানা চালাচ্ছে রাশিয়া। ‘ব্যাডর্যাবিট র্যানসামওয়্যার’ কিংবা ২০১৭ সালের ‘ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি’তে সাইবার হামলা, ব্রিটেনের একটি টিভি স্টেশন থেকে তথ্য-চুরি, সবের পিছনেই রয়েছে রাশিয়ার হাত, দাবি করেছে
ব্রিটেন। ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেন, ‘‘বেপরোয়া ভাবে হামলা করছে জিআরইউ। অন্য দেশের নির্বাচনেও প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে ওরা।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের বার্তা স্পষ্ট— বন্ধুদের দেশগুলোকে নিয়ে ওদের সব কারসাজি ফাঁস করে দেব। যোগ্য জবাব দেওয়া হবে জিআরইউকে।’’
আজই নেদারল্যান্ডসের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, তাদের ‘ওর্গানাইজেশন ফর প্রোহিবিশন অব কেমিক্যাল ওয়েপন’ (ওপিসিডব্লিউ)-এর উপরে রুশ সাইবার–হানা আটকে দিয়েছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা। ব্রিটেনের সাহায্য নিয়েই যে এ কাজ সম্ভব হয়েছে, তা-ও জানাতে ভোলেনি নেদারল্যান্ডস। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আঙ্ক বিজলেভেড জানান, জিআরইউ-এর ‘স্যান্ডস্টর্ম’ নামে চার সদস্যের একটি সাইবার ইউনিটকে গত এপ্রিল মাসে বের করে দেওয়া হয়েছিল দেশ থেকে। তারা যে রাসায়নিক অস্ত্র গবেষণাগারের উপরে নজরদারি চালাচ্ছিল, বিষয়টি ধরা পড়ে যায়। ওপিসিডব্লিউ সেই সময়ে ব্রিটেনের রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়ের উপরে রাসায়নিক হামলার তদন্ত করছিল।
ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডসের রিপোর্ট দেখে এ দিন আমেরিকা জানিয়েছে, তারাও এ বার ন্যাটোর ডোমেন নিয়ে আরও সতর্ক হবে। প্রতিরক্ষা সচিব জেমস ম্যাটিস বলেন, ‘‘আরও ঘন ঘন, আরও জটিল ও মারত্মক সাইবার হামলা হচ্ছে। ন্যাটো-কে সাহায্য করতে বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।’’ তথ্যচুরির অভিযোগ এনে সাত রুশ গুপ্তচরের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে আমেরিকা।
দিনভর তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের জবাবে রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মারিয়া জ়াখারোভার বক্তব্য, ওদের কথা মানলে কিয়েভের মেট্রো স্টেশনেও জিআরইউ হামলা চালিয়েছিল! জ়াখারোভার কথায়, ‘‘ওরা তো সবই একই বোতলে পুরছে, হয়তো ‘নিনা রিসি’ সুগন্ধীর বোতলে। দ্য জিআরইউ, সাইবারস্পাই, ক্রেমলিন হ্যাকার, ওয়াডা।’’ ব্রিটেন কিছু দিন আগেই দাবি করেছিল, ছদ্মনামে রুসলান বোশিরভ এবং আলেকজান্ডার পেত্রোভ নামে জিআরইউ-এর দুই চর, ব্রিটেনের রুশ গুপ্তচর স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়ের উপরে রাসায়নিক হামলা চালায়। ‘নোভিচক’ নামে একটি নার্ভ এজেন্ট ‘নিনা রিসি’ নামে একটি সুগন্ধীর বোতলে ছিল বলে দাবি করেছিল ব্রিটেন। অভিযোগ, গন্ধ শুকতেই বিষক্রিয়া শুরু হয়ে যায় স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়ের শরীরে।
জ়াকারোভা আরও বলেন, ‘‘ব্রিটেনের কল্পনার কোনও তুলনা হয় না! জানতে ইচ্ছে করে, কার মাথা থেকে এই সব বেরোচ্ছে? তাঁকে দেখতে ইচ্ছে করছে।’’ ব্রিটেনের বিদেশ সচিব জেরেমি হান্ট অবশ্য ছ’টি আলাদা আলাদা সাইবার হামলার ঘটনা উল্লেখ করে একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন। তাঁর দাবি, প্রত্যেকটি ঘটনার পিছনে যে জিআরইউ রয়েছে, তার প্রমাণ তাদের কাছে আছে।